কমেলার হাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হচ্ছে

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চরসুলতানপুর খালপাড় ডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধ সড়কে আশ্রিত কমেলা বেগম (৩৭)। দীর্ঘ ১২ বছর পর পেলেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তিনি ঘর পেয়েছেন।

সকালে চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কমেলা বেগমের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।

কমেলা বেগম জানান, উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বর ডাঙ্গী গ্রামের পদ্মা পাড়ে তার আদি বসতি ছিল। ২০০৮ সালে পদ্মা নদীর ভাঙনে তার বসতভিটে বিলীন হয়ে যায়। দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে উপজেলার কোথাও মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই মিলেনি।

অবশেষে নিঃস্ব পরিবার হিসেবে উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের খালপাড় ডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধ সড়কের এক পাশে খুপড়ি ঘরে বসতি শুরু করেন। এরপর কমেলার স্বামী লাবলু শেখ স্ত্রী সন্তান ফেলে রেখে উধাও হন। স্বামী পরিত্যক্ত নারী হিসেবে বাড়িতে বাড়িতে ঝিয়ের কাজ এবং কর্মসৃজন প্রকল্পে রাস্তায় রাস্তায় মাটি কেটে সন্তানদের বড় করতে থাকেন। 

কমেলা বেগমের বড় মেয়ে জেসমিন আক্তার (১৮) এর বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে রমজান আলী (১৩) ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এবং ছোট মেয়ে লাভলী আক্তার (৮) তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। 

কমেলা বেগম জানান, দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ করে সরকারিভাবে জমিসহ ঘর পাবো তা কোনোদিন চিন্তাও করি নাই। প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় ঘর হয়েছে, এখন পোলাপান মানুষ করতে পারব।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে জমিসহ ঘর প্রদান প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মোট ১৫০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। অনেক যাচাই বাছাই করে গৃহহীন পরিবার নির্বাচন করা হয়েছে। যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য একমাত্র তাদেরই জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। 

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্যা বলেন, এ বছর জমিসহ ঘর পাইতে কোনো দুঃস্থ পরিবারের একটি টাকাও খরচ হয়নি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে ৯টি উপজেলার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের তদারকিতে গড়ে উঠছে আশ্রয়হীন মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা ‘স্বপ্ননীড়’। গৃহনির্মাণের এই কাজে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। 

‘আশ্রয়ণের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার’ স্লোগান সংবলিত এ প্রকল্পে সারাদেশের মতো ফরিদপুর জেলার প্রতিটি ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবারের জন্যও থাকছে দুই কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সেমি পাকা ঘর। পরিবার পিছু একটি ঘরের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে ২ শতাংশ জমি।

শনিবার প্রথম পর্যায়ে জেলার ফরিদপুর সদর উপজেলায় ২৯২টি ঘর, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ২২০টি ঘর, বোয়ালমারী উপজেলায় ৯২টি ঘর, মধুখালী উপজেলায় ১৪৮টি ঘর, নগরকান্দা উপজেলায় ১০৫টি ঘর, সালথা উপজেলায় ৩৫টি ঘর, ভাঙ্গা উপজেলায় ২৫০টি ঘর, সদরপুর উপজেলায় ১৭৮টি ঘর, চরভদ্রাসন উপজেলায় ১৫০টি ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। 

এসপি