বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীেদের ঘর নির্মাণের জন্য জমি দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সামনে থেকে একটি বার দেখবেন। 

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে তার জীবনের চাওয়া পাওয়া ও শেষ আশার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ কথা জানান।

জানা গেছে, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রনচন্ডী এলাকার ৭২ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য নিজের ৯০ শতক জমি দান করেছেন তইন। তার দেওয়া জমিতে ৩২ পরিবারের জন্য তৈরি করা হয়েছে ঘর। দেশকে হানাদার মুক্ত ও স্বাধীন করার জন্য মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তিনি বিভিন্ন সময় এমন মানবিক কাজ করে আসছেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলায় মোট ঘর বরাদ্দ এসেছে ১০৭৭টি। তার মধ্যে ১৪২টি ঘর নির্মাণ হচ্ছে তেঁতুলিয়ার উপজেলার বিভিন্ন সরকারি খাস জমিতে। তবে রনচন্ডী এলাকায় দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। সরকারি খাস জমি নয় বরং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জমিতে তৈরি হচ্ছে লাল-সবুজ রঙের নতুন ঘর। আর এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামকরণ করা হচ্ছে মালেক নগর গুচ্ছ গ্রাম নামে। 

শুধু তাই নয় তিনি এই পরিবারের জন্য ৯০ শতক জমির ছাড়াও যাতায়াতের জন্য আরও ১৫ শতক জমি সড়ক তৈরির জন্য দান করেছেন। এখানে যারা বসবাস করবেন তাদের জন্য একটি বড় পুকুরও খনন করে দিয়েছেন তিনি। 

এ বিষয়ে জমিদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন। তেঁতুলিয়ায় ১৪২টি ঘরের বরাদ্দ এসেছে। এখানে খাস জমি তেমন না থাকায় আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমার জমিতে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। গরিব মানুষ বাস করতে পারবে ভেবে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।

এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের কাছে তার শেষ ইচ্ছে ও আশার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী। তার কাজগুলো অনেক ভাল লাগে। আমি তাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। আমার শেষ বয়সে কোনো আর আশা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীকে সরসরি কোনো দিন দেখিনি। প্রধানমন্ত্রীকে যদি সরাসরি দেখতে পেতাম এবং তার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম তাহলে আমি ধন্য হতাম। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের ছেলে আব্দুর রহমান জানান, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সব সময় মানুষের কষ্ট দেখে এগিয়ে গেছেন। তিনি মানুষের বসবাসের জন্য যে জমি দান করছেন আমরা তার সন্তান হয়ে আজ গর্বিত। বাবা টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর কাজ দেখে আমাদের বলত প্রধানমন্ত্রীর কাজ বাবার ভালো লাগে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন বাবা।

তেঁতুলিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক একজন ভাল মানুষ। তিনি প্রায় মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ান। তিনি আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যােগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাজে নিজের জমি দান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধার ইচ্ছা তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। আর এটাই তার জীবনের শেষ ইচ্ছা বলে আমাদের জানিয়েছেন।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের জমি সংগ্রহে আমরা সমস্যায় সম্মুখীন হয়েছি। সেক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক তার ৯০ শতক জমি দান করেছেন। তার জমিতে ৩২টি ঘর নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা তার নামানুসারে আব্দুল মালেক স্মৃতি সড়ক নামে নতুন সড়কের নাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছি এবং সেই গুচ্ছ গ্রামকে নামকরণ করা হচ্ছে মালেকনগর গুচ্ছ গ্রাম নামে। 

এসপি