কৃষি কাজের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে কাপড় বিক্রির করতেন মো. হযরত আলী (৫১)। বুধবার (২০অক্টোবর) ভোরে ঘুম থেকে জেগে প্রস্তুত হচ্ছিলেন রংপুরে গিয়ে পাইকারি কাপড় কেনার জন্য। উত্তরদিক থেকে হঠাৎ কান্নার শব্দ কানে আসে। শুনতে পান, গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙে গেছে সবাই মূল বাঁধে চলে যান। বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রোয়েন বাঁধে আসার পর আর নিজ বাড়িতে ঢুকতে পারেননি তিনি। বাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে নিমিষেই চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হযরত আলীর বসতভিটা।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংগের সর এলাকার গ্রোয়েন বাঁধ এলাকার বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, বাইরে বের হয়েই দেখি সবাই যে যার মতো ছোটাছুটি করছে। কেউ কারও কথা শুনছে না। ইতোমধ্যে বাঁধ ভেঙে বাড়িতে পানি উঠছে। পানির এত বেশি স্রোত, চোখের সামনেই বাড়িটা নদীতে বিলীন হয়ে গেল।

তিনি বলেন, আমার সাজানো সংসারটা চোখের সামনে নিমিষেই পানিতে মিশে গেল। শুধু তিনটা গরু আর একটা বাছুর নিতে পেরেছি। আর কিছু নিতে পারিনি।

হযরত আলী জানান, তার স্ত্রী আলেয়া খাতুন (৩৬) অনেক যত্ন করে ঘরবাড়ি সাজিয়েছিলেন। যখন পানির তোড়ে ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছিল তখন তার স্ত্রী কোনোভাবেই বাড়ি থেকে বের হতে চাইছিলেন না। অনেক কষ্ট করে তার চার মেয়ে স্ত্রী আলেয়া খাতুনকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে।

হযরত আলীর চারটি আধাপাকা ঘর ছিল। তিনি চার মেয়ে এবং দুই বছর বয়সের এক ছেলে সন্তানের বাবা।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙে হযরত আলীর মতো অন্তত চারশ জন ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। শুধু পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নেই এক হাজার পাঁচশ পরিবার পানিবন্দি।

জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, মধ্যরাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু স্বস্তি নেই। গ্রোয়েন বাঁধের যে দুটি অংশ ভেঙে গেছে সেখানেই ৩০টি ঘর তলিয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন প্রায় তিনশ পরিবার। দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। আজ উত্তোলন করে বিতরণ করা হবে। গতকাল (বুধবার) ও আজ (বৃহস্পতিবার) পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। সকাল ১০টায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৮টায় পানি প্রবাহ কমে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে স্বাভাবিক পরিমাপ ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।

নীলফামারী/এসএসএইচ