পাসপোর্ট অফিসে কলিংবেল চাপলেই হাজির কর্মকর্তা
অফিসের মধ্যেই দোকান। প্রয়োজনীয় জিনিসটি নিয়ে নির্ধারিত স্থানে পণ্যের মূল্য রাখছেন ক্রেতারা, শিখছেন সততা। বিক্রেতা ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে ‘আত্মপ্রেরণা’র দোকানটি। এছাড়া চলতে না পারা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কলিংবেল চাপলেই হাজির হন কর্মকর্তা।
ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সাধারণ মানুষ। বলছেন, প্রত্যেকটি সরকারি অফিস ও কর্মকর্তাগুলো সৎ হলেই দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন হাফিজুর রহমান। পাসপোর্ট করবেন তিনি। পাসপোর্ট অফিসের আত্মপ্রেরণার দোকান থেকে একটি মাস্ক নিয়ে নির্ধারিত স্থানে মূল্য রেখে দেন হাফিজুর রহমান।
এরপর ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এটা অনেক ভালো হয়েছে। প্রয়োজনে অনেকেই জিনিস নিচ্ছেন মূল্যও যথাস্থানে রাখছেন। বাইরে যেতে হচ্ছে না। আমার কাছে কেউ টাকা চাইনি কিন্তু আমি টাকা রেখে দিয়েছি এটা সততার বহিঃপ্রকাশ।
বিজ্ঞাপন
শহরের পলাশপোল এলাকায় সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। ব্যতিক্রমী দুটি উদ্যোগ যেন নজর কাড়ছে সবার। অফিসের ভেতরে আত্মপ্রেরণার দোকান ও দ্বিতীয় তলায় ওঠা সিঁড়ির পাশে দেওয়া কলিংবেল।
দোকানটিতে রয়েছে মাস্ক, বিস্কুট, পানির বোতল, চকলেট, চিপস, চানাচুরসহ বিভিন্ন সামগ্রী। সিঁড়ির পাশে ঝুঁলিয়ে দেওয়া ব্যানারটিতে লেখা রয়েছে, ‘আপনার সমস্যায় আমি। শুধু অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কলিংবেল চাপুন। সাথে সাথে অফিসার আপনার সেবায় এগিয়ে আসবেন।’
অফিসে আগত আলাউদ্দীন বিশ্বাস জানান, আগেও আমি পাসপোর্ট অফিসে এসেছি তবে নতুন সংযোজন দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গেছি। দোকানটি থেকে সততার পরিচয় মেলে। সাধারণত দোকান থেকে পণ্য কিনে দোকানদারের কাছে আমরা টাকা দেই কিন্তু এখানে সেটি নেই। নিজের মতো করে নিয়ে নিজেই টাকাটি রেখে দিয়েছি। সত্যিই এটি অসাধারণ একটি ভালো বিষয়।
অফিসে আগত ফাহিমা সুলতানা বলেন, আমরা যেমন সততার সঙ্গে জিনিস নিয়ে টাকা রাখছি তেমনি সব অফিসের কর্মকর্তারা যদি সৎ হয় তবে দেশে দুর্নীতি থাকবে না।
অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন বিলকিস নাহার। পাসপোর্ট অফিসের জমা দেওয়া স্বামীর কাগজপত্রের খোঁজখবর নিতে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাসপোর্ট অফিসে আসেন তারা।
বিলকিস নাহার জানান, আমার স্বামী অসুস্থ এখন ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। দ্বিতীয়তলায় ওঠার সিঁড়িতে কলিংবেল চাপ দিয়ে দেখলাম ওপর থেকে স্যার এসে হাজির হলেন। আমার কথা শুনলেন ও সমাধানের পরামর্শ দিলেন এতে আমি খুশি হয়েছি।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে অনেকেই খুব কষ্ট করে অফিসে আসেন। অনেকের মাস্ক থাকে না। অনেকে বাচ্চাদের নিয়ে আসেন কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আবার অনেকের তৃষ্ণাও পায়। সেজন্য আগতদের সুবিধার্থে মাস্ক, পানি, বাচ্চাদের জন্য চিপস, চকলেটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রেখেছি।
তিনি বলেন, এছাড়া অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ যাদের দ্বিতীয়তলায় আমার কাছে আসার প্রয়োজন কিন্তু আসতে পারছেন না। তাদের জন্য সিঁড়ির পাশে কলিংবেল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কলিংবেল চাপ দিলেই আমি তার কাছে ছুটে যাই। সমস্যাটির কথা শুনি ও সমাধান করার চেষ্টা করি। আশাকরি এগুলো অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।
আকরামুল ইসলাম/এমএসআর