বাগেরহাটে বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দুটি আদালত। ফলে দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও মেলেনি সুরাহা। তবে দ্রুতই বিষয়টি মীমাংসা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী।

আইনজীবী ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এবং সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ এনে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় আইনজীবী সমিতি। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে এই দুটি আদালতের কার্যক্রম। আদালত বন্ধ থাকায় আটকে আছে পাঁচ সহস্রাধিক মামলার বিচারকাজ। 

সদর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের বিচারপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ২০১৯ সালে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেছিলাম । ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হওয়ার পর দেখি আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন। দুই থেকে তিন বার একই ঘটনা ঘটেছে। ধার্য তারিখে আসি আর ফিরে যাই। কিন্তু বিচার কাজের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
  
তিনি আরও বলেন, আইনের মাধ্যমে মানুষ সঠিক বিচার পায়। এ জন্যই আমরা আইনের আশ্রয় নিই, আদালতে আসি। কিন্তু এখানেও যদি ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা লাগে, তাহলে আমরা আর কোথায় যাব। 

শুধু দেলোয়ারই নয় আরও অনেক বিচার প্রার্থীই এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়া অসংখ্য মামলার আসামি রায়ের না হওয়ায় কারাগারে রয়েছেন। 

কারাগারে থাকা এক কয়েদির স্বজন জানান, আদালত বন্ধ থাকায় এক বছর ধরে কোনো রায়ও হচ্ছে না। আমরা বিচারও পাচ্ছি না। আইনজীবী-বিচারকদের দ্বন্দের জের আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের টানতে হচ্ছে।

বাগেরহাটের সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালতে জমি-জমা সংক্রান্ত মামলার বাদী শেখ মোফাজ্জেল জানান, আইনজীবীদের আদালত বয়কট ও বিচারকাজ বন্ধ থাকার কারণে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার মধ্যে রয়েছি। আমরা চাই দ্রুত যেন এই সমস্যার সমাধান হয়। 

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন বিচারকদ্বয়। পরবর্তীতে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আদালত বর্জন করি। কিন্তু আদালত বর্জন হওয়ার পূর্বে আমরা কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছিলাম। কোনো সমাধান না হওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত এই দুই বিচারককে প্রত্যাহার করে সৎ ও নিষ্ঠাবান বিচারক পদায়নের দাবি জানান তিনি। 

আইনজীবী সমিতির সদস্য শিকদার ইমরান বলেন, আমার এক মক্কেলের হত্যা মামলায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার। যদি নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে উপযুক্ত আদেশ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বছরের বছর পার হলেও কোনো যুক্তিতর্ক না হওয়ায় বিনা বিচারে অভিযুক্ত এখনো জেলে রয়েছেন। 

বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর  অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। বার এবং বেঞ্চে আলাপ হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে। 

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, পুরাতন আদালত ভবনের জমি নিয়ে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত একটি তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল এসেছিল। ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক হয়েছিল। পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

তানজীম আহমেদ/আরএআর