নুপুরের পাশে দাঁড়াল ‘জনস্বার্থে আমরা’
আবার মাদরাসায় যেতে পারছে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মাহিনুর আক্তার নুপুর
ব্রেন স্ট্রোক করে আড়াই বছর অসুস্থ থাকার পরে চলতি বছরের জুলাই মাসে বাবা নাসির উদ্দিন মারা যান। বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থাতেই দুটি কন্যাসন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু করেন মা নার্গিস বেগম। ৪ বছরের ছোট মেয়ে নুসরাত আর বড় মেয়ে নুপরের চাহিদা পূরণের জন্য সংসারের হাল ধরেন মা।
অল্প আয় দিয়ে সংসার চালাতেই অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ে মা নার্গিসের। এরমধ্যে কন্যা মাহিনুর আক্তার নুপুরের লেখাপাড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে ৩ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় নুপুরের লেখাপড়া।
বিজ্ঞাপন
এমন সময়ে নার্গিস বেগম ও তার কন্যা নুপুরের পাশে এসে দাঁড়ায় ‘জনস্বার্থে আমরা’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি নুপুরের লেখাপড়ার সব খরচের দায়িত্ব নেওয়ায় নুপুর ও তার মায়ের মুখে হাসি ফুটে।
বলছি মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার বায়ড়া ইউনিয়নের শানাইল গ্রামের সুমাইয়া বালিকা মাদরাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মাহিনুর আক্তার নুপুরের কথা।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুপুরের বাবা ব্রেন স্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়ে আড়াই বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তার বাবা। হঠাৎ বাবার অসুস্থতায় বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের আয় রোজগার। এ সময় সংসারের হাল ধরতে তার মা নার্গিস বেগম বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে।
মায়ের অল্প আয় দিয়ে তার বাবার চিকিৎসাও ভালোভাবে করাতে পারে নাই। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় আড়াই মাস আগে মারা যান নুপুরের বাবা। বর্তমানে তার মা স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তবে কারখানায় কাজ করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য।
রোজগার তেমন না থাকায় তিন মাস ধরে নুপুরের মা মেয়ের বই, খাতা কেনার টাকাসহ মাদরাসার বেতন দিতে পারে নাই। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নুপুরের লেখাপড়া। এ বিষয়টি জানার পরে সামাজিক সংগঠন জনস্বার্থে আমরা নুপুরের লেখাপড়ার সব খরচের দায়িত্ব নেয়।
নুপুরের মা নার্গিস বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়া পরে মাজনের কারখানায় কাজ শুরু করি। যা বেতন পাই তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। মাদরাসার বেতন দিতে না পারায় মেয়ের লেখাপড়া তিন মাস বন্ধ ছিল। পরে একটি সামাজিক সংগঠন থেকে প্রতিমাসে মেয়ের খাতা, কলম, বই, মাদরাসার বেতনসহ আনুষাঙ্গিক খরচ দিচ্ছে। এতে আমার মেয়ের লেখাপড়া করতে পারছে।
মাহিনুর আক্তার নুপুরের সঙ্গে লেখাপড়ার বিষয়ে আলাপাকালে সে বলেন, টাকাপয়সার অভাবে বাবাকে ভালো চিকিৎসা করাতে পারি নাই। মা কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালায়। লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হতে চাই, ভালো মানুষ হতে চাই।
সামাজিক সংগঠন ‘জনস্বার্থে আমরা’ সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিনুর রহমান বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা কয়েকজন মিলে এই সংগঠনটি করেছি। কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকার অভাবে কোনো শিশুর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে এটি কাম্য নয়। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামাজিক সংগঠনটিকে সাধুবাদ জানাই। আমার কাছে আসলে অবশ্যই নুপুরের লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হবে।
সোহেল হোসেন/এমএসআর