ফরিদপুরের সালথায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারিজ সিকদার (৩৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। 

নিহত মারিজ সিকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিক মোল্লার সমর্থক ও সালথার খারদিয়া গ্রামের তোরাব সিকদারের ছেলে।

এদিকে মারিজ সিকদারের মৃত্যুর পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা করেছেন। হামলায় অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের বাড়িও রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সালথা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমর্থক গ্রাম্য মাতব্বর মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর।

রফিক মোল্লা ও নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর খারদিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে একই গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। কিন্তু গত এক মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া নিয়ে বিরোধ শুরু হয় তাদের মাঝে। এর জের ধরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর নৌকার প্রার্থী রব মোল্লা ও তার সমর্থক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার গ্রুপে যোগ দেন। এ নিয়ে শনিবার সকাল থেকে খারদিয়া এলাকায় উভয় প্রার্থীর শত শত সমর্থক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বসতঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।

এতে মারিজ সিকদার, নাসির মোল্লা, রহিম মোল্লা, রশিদ শেখ, সাকিব মোল্লা ও টেপু শেখসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকের সমর্থক মারিজ সিকদার মারা যান। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। 

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষের হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরএআর