দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত পায়রা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সড়ক ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন দৃশ্যমান হলো। সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণে এখন আর পদ্মা পার হতে ফেরি বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সড়ক যোগাযোগ যেমন নিরবচ্ছিন্ন হয়েছে তেমনি লেবুখালীর পায়রা নদীতে শতাব্দীকাল ধরে চলাচলকারী ফেরি বন্ধ হয়েছে। 

সরেজমিনে সেতু এলাকায় আজ সকালে দেখা যায়, ফেরি বন্ধ হওয়ায় জীবিকা উপার্জন নিয়ে উৎকণ্ঠায় প্রায় দেড় শতাধিক টং ঘর এবং ফেরিওয়ালা খাবার বিক্রেতা। এসব ফেরিওয়ালা ঘরে তৈরী আচার, মুড়ি ভাজা, চিড়া-মুড়ি ভাজা, চা, আইসক্রিম ইত্যাদি বিক্রি করতেন।
 
তারা জানিয়েছেন, পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া পেশা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আপাতত বন্ধ হয়েছে। এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য নতুন উপায় খুঁজতে হবে। 

এ বিষয়ে চা দোকানি নুরুজ্জামান ফরাজী জানান, জন্মের আগে ফেরিতে আমার আব্বা চা বিক্রি করতেন। তা দিয়েই সংসার চলত। আমিও এখানে ৩৫ বছর চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। সংসারের ১২ জনের খাবার জুটতো ফেরিতে দোকান দিয়ে। আজ বন্ধ হয়েছে সে দোকান। তবে খারাপ লাগলেও কিছু বলার নেই। সেতুটি আমাদের জাতীয় স্বার্থ। এ জন্য হয়ত অন্য কোথাও রোজগারের উপায় খুঁজতে হবে।

মাথায় বিশাল এক আচারের বাক্স নিয়ে মলিন মুখে ঘুরছিলেন মিলন। দু’ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার তার। ১২ বছর ধরে আচার বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। মিলন বলেন, কোটি মানুষের উপকারের জন্য আমার মতো হকার আচারওয়ালার একটু ক্ষতি হলে কী আর হবে। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আর টং ঘরের ব্যবসায়ী আছে। তারা এসব বিক্রি করেই চলতেন। কিন্তু আজ আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর কি ব্যবসা করে সংসার চালাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

২০ বছর ধরে ফেরিতে চিড়া বিক্রি করেন আনোয়ার হোসেন। মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মূল বাড়ি হলেও লেবুখালী ফেরিঘাটে চিড়া বিক্রি শুরু করার পর থেকে সপরিবারে এখানেই থাকেন। আক্ষেপ করে আনোয়ার বলছিলেন, আমরা গরিব। চিড়া বিক্রি করে চাল-ডাল কিনতাম। এখন আর আমাদের চিড়া কেউ কিনবে না। কেনার সময় কোথায়? সেতুতেতো আর চিড়া বিক্রি করা যাবে না। বলতে পারেন আমার আয়ের পথ বন্ধ।

কথা হয় টং চা দোকানের মালিক মনিরের সাথে। তিনি বলেন, ফেরিঘাটে দোকান বসানো গিয়েছিল। সেতুর ঢালেতো দোকান বসাতে পারব না। আর চা দোকানদারি করলে কারও পজিশন ভাড়া নিয়ে তো দোকান দিতে পারব না। ফেরি বন্ধের সাথে সাথে আমার ব্যবসাও বন্ধ। তবে সেতুর জন্য আমি নিজেও অনেক খুশি।

প্রসঙ্গত, রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি ১৩শ'র অধিক শ্রমিক পাঁচ বছর কাজ করে নির্মাণ করেছেন সেতুটি। তবে প্রকল্প অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে সেতু চালু হতে। সেতুতে ৩২টি স্প্যান, ৫৫টি টেস্ট পাইল, ১৬৭টি বক্স গার্ডার, ২৮৬টি পাইল, ৩১টি পাইলক্যাপ, ২২৪টি আই গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। মূলত ২০১২ সালের ৮ মে একনেকে অনুমোদন পায় পায়রা সেতু প্রকল্প।

আরআই