বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে নার্সদের টাকা নেওয়ার অভিযোগ পুরোনো। টাকা নেওয়ার পুরোনো সেই অভিযোগ নতুন করে পুরো প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

সাধারণ রোগীর কাছ থেকে নার্সরা টাকা নিলে হয়তো বিষয়টি গোপন থাকত, কিন্তু ‘চা-নাশতা’ খরচ হিসেবে টাকা নিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে। এতেই বেধেছে বিপত্তি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ‘বিষয়টি দেখতে’ বলেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরকে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রশাসনকে।

আদেশ পেয়ে ইতোমধ্যে ‘চা-নাশতা’ খরচ রাখা তিন নার্সকে অব্যাহতি দিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে হয়রানির শিকার রোগী লিখিত অভিযোগ দিতে রাজি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা চুন্নু মিয়া ৩১ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চলে যান তিনি।

চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যান্ডেজ খুলতে ও ক্ষত স্থানের ড্রেসিং কাটাতে হাসপাতালে আসেন চুন্নু মিয়া। তিনি মেডিকেল কর্মকর্তা অভ্র মিত্রের সঙ্গে দেখা করেন। অভ্র মিত্র রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করেন ড্রেসিং করানোর জন্য। সেখানে দায়িত্বরত নার্স নূরে আলম, কাদের খাঁ ও মিজানুর রহমান ড্রেসিং বাবদ চুন্নু মিয়ার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ‘চা-নাশতা’ খরচ চান।

চুন্নু মিয়া তাদের টাকা দিয়ে চলে যান। পরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবকে জানান তিনি। ওই অতিরিক্ত সচিব মূলত চুন্নু মিয়ার আত্মীয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিকিৎসক সৌরভ সুতার।

সৌরভ সুতার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছি। প্রথমে জেনেছি আউটডোরে দায়িত্বরতরা টাকা নিয়েছেন। পরে জানলাম ঘটনাটি জরুরি বিভাগে ঘটেছে। সেখানের দায়িত্বরত চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেন।

আমিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে রাজি হননি। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) হাসপাতাল প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে অবহিত করা হলে আমিরুল ইসলাম রাত ১১টার পরে কথা বলার জন্য সময় বেঁধে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

জরুরি বিভাগের নার্স ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ শিকদার বলেন, তিনজন নয়, জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী সাতজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, শনিবার আমরা সবাই বসেছিলাম। সেখানে যে রোগীর কাছ থেকে টাকা রাখা হয়েছিল তিনিও ছিলেন। তিনি বলেছেন লিখিত অভিযোগ দেবেন না। তিনি অভিযোগ দিতে চান না। তিনি যদি অভিযোগ না দেন তাহলে আমরা কীভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব?।

রোগীর কাছ থেকে ড্রেসিং বাবদ টাকা রাখার ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। এখনো ঘটনার সমাধান হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি; আসলে কী ঘটেছিল সেদিন। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেলিনা আক্তার, নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেসিং বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়টি চুন্নু মিয়া অতিরিক্ত সচিবকে জানান। অতিরিক্ত সচিব বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডলকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। 

এ বিষয়ে চিকিৎসক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বিষয়টি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে ড্রেসিং বাবদ রোগীর কাছ থেকে টাকা রাখা অন্যায়। ঘটনাটি জানতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন।

জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, যার কাছ থেকে ড্রেসিং বাবদ টাকা রেখেছে বলে আমরা জেনেছি তাকে ডেকে এনেছি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে রাজি হননি। কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলে তদন্ত করা যায় না, ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না। এরপরও অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়েছি আমরা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মতামত জানতে চাইলে তিনি তার আত্মীয়ের (অতিরিক্ত সচিব) পরামর্শে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে রাজি নন বলে জানান।

এএম