ফরিদপুরে জাল কাবিনানামা দেখিয়ে এক তরুণীকে (১৮) ধর্ষণ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে এক ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুইজনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার(২৬ অক্টোবর)  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় এ রায় দেন।

মৃত্যুর আগে ওই তরুণী চিকিৎসকের কাছে জবানবন্দি দিয়ে যান। সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে যুক্তিতর্ক শেষে এ রায় দেওয়া হয়। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম মো. সাহাবুদ্দিন খান (৩৫) আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম সুমন খান। তারা জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার ধলাইরচর গ্রামের বাসিন্দা সেকেন্দার খানের ছেলে তারা। রায় ঘোষণার সময় দুই ভাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১১ সালের ২৭ জুন সাহাবুদ্দিনের মা আছিয়া বেগম তার পুত্রবধূ ঝুমুর বেগমকে দিয়ে প্রতিবেশী ওই তরুণীকে তার বাড়িতে ডেকে আনেন। পরে সাহাবুদ্দিন কেরোসিন তেল গায়ে ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে মেয়েটি দগ্ধ হন। এরপর সাহাবুদ্দিনের ভাই সুমন খান লাঠি দিয়ে মেয়েটিকে পেটান। এর ফলে তিনি জ্ঞান হারান। 

পরে পরিবারের সদস্যরা ওই তরুণীকে প্রথমে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ১৪ দিন পর ১১ জুলাই ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান । কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কাছে জবানবন্দি দিয়ে যান। 

সেই চিকিৎসকের কাছে সাহাবুদ্দিনের আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং সাহাবুদ্দিনের ভাই সুমন খানের লাঠি দিয়ে আঘাত করার কথা বলে যান তিনি। সাহাবুদ্দিন প্রতারণা করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সেটাকে কাবিননামা বলে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছেন বলেও চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন তিনি।

আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৪ জুলাই সাহাবুদ্দিন, সুমন খান, আছিয়া বেগম ও সুমনের স্ত্রী ঝুমা বেগমকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় আলফাডাঙ্গা থানায়। এরপর ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা উপজেলা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল ইসলাম আদালতে ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
তবে আছিয়া বেগম ও ঝুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন পাল বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ের নামে ধর্ষণ এবং আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক এ ঘটনায় আদালত থেকে ন্যায় বিচার পেয়েছি। 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। ন্যায় বিচারের পেতে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

আরএআর