রাজবাড়ী শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গোদার বাজার এলাকায় আবারও পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে পদ্মার ডান তীর সুরক্ষা প্রকল্পের কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লকসহ ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে হুমকিতে রয়েছে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোদারবাজার এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ভাঙন দেখা দেয়।

সরেজমিনে ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার করালগ্রাসে বিলীন হয়েছে ডান তীর সুরক্ষা প্রকল্পের সিসি ব্লকসহ প্রায় ২০০ মিটার এলাকা। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারদের। ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার প্রায় ৩০টি বসতভিটা, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। এছাড়া ভাঙনের স্থান থেকে শহররক্ষা বাঁধের দূরত্ব মাত্র ১৪ মিটার। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে শহররক্ষা বাঁধ। ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই তাদের বসতভিটা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ফেজ-২ এর সাড়ে ৪ কিলোমিটার নতুন এবং ফেজ-১ এর সংশোধিত আড়াই কিলোমিটারসহ মোট ৭ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় ভাঙন। ফলে এখন পর্যন্ত নতুন ও সংশোধিত প্রকল্প দুটির প্রায় ২১টি স্থানে প্রায় ১ হাজার মিটারের মতো এলাকার সিসি ব্লক নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল, মসজিদ, বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরুজ মিঞা বলেন, সকাল থেকে হঠাৎ করে নদীর স্রোত বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। আমার চোখের সামনে নদীপাড়ের বড় একটি অংশ ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীতে চলে যায়। ভাঙন স্থান থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব ১০ মিটারের মতো। তাই বাড়িঘর অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।

ষাটোর্ধ্ব নুরুন্নাহার বলেন, ‘যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমার বাড়ি থেকে গাঙ ছিল দুই কিলোমিটার দূরে। এহন গাঙ ভাঙতে ভাঙতে আমার বসতবাড়ির পিছনে চইলে আইছে। আর কিছু দিন গেলে আমার ভিটাডাও থাকব না। তখন আমি কনে যাব?’

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আজ রাজবাড়ী শহর হুমকির মুখে। কিছু ব্যক্তি তাদের পকেট ভারী করতে গিয়ে রাজবাড়ী শহরকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এখন রাজবাড়ী শহরটাকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে।

তারা বলেন, স্থানীয় ঠিকাদার দিয়ে কাজ করালে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধের কাজটা সেনাবাহিনীকে দিয়ে করালে শহরটা রক্ষা করা যাবে। অন্যথায় রাজবাড়ী শহর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। 

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে ভাঙন দেখা দিলে আমাদের ঠিকাদাররা জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলেছেন। জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া আপাতত আমাদের আর করার কিছুই নেই। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে না পারলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। 

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর/জেএস