সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। ফলে মৌসুমের আগাম সবজি কিনতে বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। শুরুতে সবজির দাম বেশি পাওয়ার আশায় চাষিরাও ব্যস্ত সবজি পরিচর্যায়। গান, মাছ আর ধানের জেলা সুনামগঞ্জ। বছরের শুষ্ক মৌসুমে একবার বোরো ফসল আর বর্ষায় মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন এই জেলার মানুষ। তবে এখানে কিছু উঁচু এলাকা রয়েছে যেখানে বারোমাসি শাকসবজি চাষাবাদ হয়। 

কার্তিকের হাত ধরে চিরায়ত বাংলায় যখন হেমন্ত, ঠিক তখনই আসন্ন শীতের আগাম নরম ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। এর সাথে সাথে শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমার উত্তরপাড়ের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সবজি খেত, দোয়ারাবাজার ও বিশম্ভরপুর সীমান্ত এলাকাসহ পুরো জেলা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, পাতি লাউ, করলা, পটল, শসা, ঝিঙা, শিম, লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজি উঠেছে বাজারে। নতুন সবজি পেয়ে খুশি ক্রেতারাও।

সুনামগঞ্জ সদরের সবজি ক্রেতা আলাউর রহমান বলেন, শীতকালীন সবজি এখন বাজারে পাচ্ছি আমরা। এ সবজি খুবই ভালো। খেতেও ভালো লাগে।

আরেক সবজি ক্রেতা মো. আবুল কালাম বলেন, এখন সিজনাল সবজি বাজারে এসেছে। এ জন্য দাম তুলনামূলক কিছুটা বাড়তি। তবে কয়েকদিনের ভেতর এই সবজির দাম কমে আসবে। 

খুচরা সবজি বিক্রেতা চন্টু দাস বলেন, শীতকালীন সবজি কিছু বাজারে আসা শুরু করেছে। দিন যত যাবে তত বাড়বে। শসা, পাতিলাউ, মুলা এগুলো বাজারে এসেছে। নতুন সবজির প্রতি ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি।

আগাম সবজির উপযুক্ত দাম পেয়ে খুশি সবজি চাষিরাও। ফলন ভালো হওয়ায় স্বস্তি তাদের। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে সব ধরনের সবজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা। শীতকালীন সবজি সুনামগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চাষাবাদে সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়ানোর দাবি সুনামগঞ্জের সবজি চাষিদের।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বেরিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, এবার শীতকালীন সবজির আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে দামও পাচ্ছি ভালো। এ বছর বেশি বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমাদের ফসল ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত রোদও রয়েছে। তবে ক্ষেতের কিছু সবজি বিক্রি শুরু করেছি।
 
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ঝিনারগাঁও গ্রামের সবজি চাষি কৃষক আহমদ নূর বলেন, আমি ৫ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমিতে সবজি চাষ করেছি। এতে আমার প্রায় একলক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ফসল ভালো হওয়ায় প্রায় ২ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন এবার জেলায় ১১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু হয়েছে। অন্য বছরের মতো এবারও শীত মৌসুমে চাষকৃত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রফতানি করা সম্ভব হবে।

সাইদুর রহমান আসাদ/আরআই