অচেনা এক প্রাণীর আক্রমণের ভয়ে দিন পার করছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাথপুর ও তালুক কেঁওয়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ইতোমধ্যে প্রাণীটির আক্রমণে শিশুসহ অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া মারা গেছেন ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৫) নামে স্থানীয় এক মসজিদের ঈমাম। 

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে প্রাণীটির আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের ছোট-বড় সবাই লাঠি হাতে চলাফেরা করছেন।

জানা গেছে, গত এক মাস ধরে অচেনা এ প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে শিশুসহ অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে গুরুতর আহতরা হলেন, আমরুল ইসলাম (৩২), হামিদ মিয়া (৪০), সুমি বেগম (৪০), মনজিলা বেগম (৩৮) ও মসজিদের ঈমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৫)। তাদের সবার বাড়ি হরিনাথপুর, তালুকজামিরা, কেঁওয়াবাড়ি, দেওয়ানের বাজার ও কুমতিপুর গ্রামে। 

এদের মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে অচেনা প্রাণীটির প্রথম আক্রমণের শিকার হন ফেরদৌস সরকার রুকু। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ১৮ দিন পর নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।

সর্বশেষ গত রোববার দাদার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে আসার সময় প্রাণীটি হামলা করে কেঁওয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাব্বী শেখকে। এ সময় তার মা ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার ওপরেও হামলা করে প্রাণীটি। 

আহত আমরুল ইসলাম, হামিদ মিয়া ও মনজিলা বেগম জানান, বাড়ির পাশে কাজ করার সময় হঠাৎ করে প্রাণীটি তাদের আক্রমণ করে। এতে তাদের মুখ-চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম হয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন তারা।

আহতরা ছাড়াও গ্রামবাসী জানায়, অচেনা এ প্রাণীটি দেখতে শেয়ালের মতো। লাল, সাদা ও ধূসর রংয়ের প্রাণীটির শরীরে রয়েছে ডোরাকাটা দাগ। সামনের পা দুটি ছোট হলেও মুখ লম্বা এবং লেজ আকারে বেশ বড়। ধানক্ষেত কিংবা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা প্রাণীটি দিনে কিংবা রাতে মানুষ দেখলে হঠাৎ আক্রমণ করে বসে। প্রাণীটির আক্রমণে দুটি কুকুর মারা গেছে।  

কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের সাইদুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম টিপু জানান, বাড়ির পাশে ধানের জমি কিংবা বাঁশঝাড়ের পাশে ঘাস কাটতে গেলে প্রাণীটি আক্রমণ করে। এ ছাড়া হাট-বাজার ও স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময়েও অনেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা কুকুরও।

তালুক জামিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন জানান, প্রাণীটির এমন আচরণে ভয়-আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে। প্রাণীটির হিংস্র থাবায় ছোট-বড় সকলে বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা চললেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কেউ খোঁজখবর নেয়নি। এ ঘটনায় হাট-বাজারে যাওয়া-আসা বন্ধের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। 

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত শেয়াল কিংবা কুকুর জাতীয় এ প্রাণীটি লোকালয়ে ঢুকে মানুষ ও প্রাণীর ওপর আক্রমণ করছে। প্রাণীটিকে শনাক্ত করাসহ তাকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রাকিব হোসেন জানান, প্রাণীটির আক্রমণের বিষয়টি তাদের জানা আছে। এ বিষয়ে এলাকার জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল মতিন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাণীটি শনাক্ত করাসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রিপন আকন্দ/আরআই