বেনাপোল থেকে পণ্য বোঝাই করে কাভার্ড ভ্যান নিয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে আসি বুধবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে। সকাল ৯টার দিকে উঠি ফেরি আমানত শাহে। মাঝ-নদীতে যাওয়ার পর ফেরিতে উঠতে শুরু করে পানি। এরপর ফেরি পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়ে। তিনটি গাড়ি নামতেই ডুবে যায় ফেরিটি। এই দেড় মিনিটের ব্যবধানে শেষ হয়ে যায় আমার সব স্বপ্ন।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ৪টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫ নাম্বার পন্টুন এলাকায় এভাবেই কথাগুলো বললেন উদ্ধার হওয়া কাভার্ড ভ্যানের চালক কামাল মোল্লা।

যশোর সদর উপজেলার বেকুটিয়া ইউনিয়নের খোলাডাঙ্গা নতুনপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল হামিদ মোল্লার ছেলে কামাল মোল্লা।

কামাল বলেন, অভাব-অনটনে হয়নি পড়াশোনা। পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে গাড়িতে থাকি। এরপর ধীরে ধীরে গাড়ি চালানো শিখি। দুই বছর আগে জমানো কিছু টাকা দিয়ে নিজের মনে পুষে রাখা স্বপ্নপূরণের জন্য কিস্তিতে গাড়ি কিনি। কিন্তু সেই গাড়িটিও ডুবে গেল পদ্মায়। আমার সব শেষ হয়ে গেল। এই গাড়ি বাড়ি নেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই।

দুই বছর আগে সাড়ে ৮ লাখ টাকা জমা দিয়ে কিস্তিতে কাভার্ড ভ্যানটি (ঢাকা মেট্রো ট ১৩-৪৫৭৪) কেনেন কামাল মোল্লা। তার গাড়ির চাকা ঘুরলেই ঘোরে সংসারের চাকা। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কামাল মোল্লার সংসার। মাস শেষে কিস্তি দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। এই কিস্তি ছাড়াও আত্মীয়দের কাছ থেকেও কিছু টাকা ধার নেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কামাল বলেন, দুই বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। তবে ফেরিডুবি সবশেষ করে দিল। নিজে কষ্ট করলেও ছেলে-মেয়েদের সাধ্যানুযায়ী পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সব শেষ।

ফেরিডুবির পর তার গাড়িটি উদ্ধার হলেও এখনো বুঝে পাননি। চার দিন ধরে রুটি-কলা খেয়ে দিন কাটছে ঘাট এলাকায়। এখন এই গাড়ি নিয়ে কীভাবে বাড়ি যাবেন, সেই চিন্তায় অস্থির কামাল মোল্লা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ফেরিডুবির ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এখানে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি।

সোহেল হোসেন/এনএ