সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন কাজল আহমদ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুর গ্রামে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রাম্য সালিস না মানায় তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কাজল আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ভাই আকমল হোসেন ও সমাজচ্যুত অন্য একটি পরিবারের সদস্য জুবেল আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে কাজল জানান, জায়গাজমি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজলের দাদার ভাই তোরাব আলীর নাতি পাখি মিয়ার সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিসকারী ও পঞ্চায়েত কমিটিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে গেলে তারা উভয় পক্ষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জামানত নিয়ে সালিসের সময় দেন ২০২০ সালের ১৯ জুন। সালিসের দিন জায়গার কাগজপত্র নেন। সালিসে তিনি কাগজ অনুযায়ী ন্যায় বিচারের দাবি করেন তাদের কাছে।

রেকর্ডে ১ শতাংশ জায়গার মালিক হলেও গ্রাম্য পঞ্চায়েতে সালিসকারীরা তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেননি। এ নিয়ে কাজল ন্যায় বিচারের জন্য ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব মামলা (মামলা নম্বর ৯৭/২০২০) করেন।

কাজল আরও জানান, আদালতে মামলা করায় সালিসকারীরা ক্ষীপ্ত হয়ে ৫ ডিসেম্বর মামলার বিবাদীর বাড়িতে বসে কাজলের পরিবারকে কোরবানপুর গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত করেন। সালিসকারীরা এলাকার লোকদের তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ করেন। যারা কাজলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাবে, তাদেরও পরিণতি কাজলের মতো হবে। তিনি আরও জানান, সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের জন্য সাপ্তাহিক যে চাঁদা নেওয়া হতো, তাও নিতে নিষেধ করা হয়। এ কারণে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ টাকা বকেয়া আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনকি কাজলের পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে তাদের বাড়িতে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করা হয়।

কাজল আহমদ জানান, সমাজচ্যুত করার কারণে ১৪ ডিসেম্বর চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরনের বাধাবিপত্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা এমনকি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে না দেওয়াসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্গনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নামোল্লেখ করে কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ওই লিগ্যাল নোটিশের কোনো সন্তোষজনক জবাব তারা দেননি। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোয় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সালিসকারীরা বিবাদী পাখি মিয়ার বাড়িতে পুনরায় বসে তাদের পাঁচ বছরের জন্য চূড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন।

বিষয়টি আমি অবগত নই। এ রকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এ রকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। এবং আইন অনুযায়ী সমাজচ্যুত করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদেরও সমাজচ্যুত করা হয়। সালিসে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্র সালিসকারীরা আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেননি। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের ছেলে-সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কোরআন শিক্ষা করতে পারছে না সমাজচ্যুতের কারণে। তাদের সমাজের ছোটরাও হেয় করে কথা বলছে। এ জন্য তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত।

এ বিষয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। তবে পঞ্চায়েত কমিটির অপর সদস্য চুনু মিয়া কাজলদের সমাজচ্যুত করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ভূকশীমইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। এ রকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এ রকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। এবং আইন অনুযায়ী সমাজচ্যুত করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএ