নিহত সিয়াম

ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলায় হানিফ পরিবহনের ধাক্কায় সিয়াম ইসলাম (১৩) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবহনমালিকের দেওয়া এক লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে তার পরিবার।

সোমবার (১ নভেম্বর) এক লাখ টাকা নিয়ে নিহত সিয়ামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন পরিবহনের লোকজন। এ সময় টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে শেষে সিয়ামের মাগফিরাত কামনায় স্থানীয় মসজিদে উন্নয়নের জন্য মসজিদ কমিটিকে বুঝিয়ে দেয় পরিবহনের মালিকপক্ষ।

এ ঘটনায় সঙ্গে থাকা মটর শ্রমিকনেতা শাহাদত হোসেন বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অনুদানের এক লাখ টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই সেই টাকা নিতে রাজি হয়নি। অবশেষ সেই টাকা সিয়ামের মাগফিরাত কামনায় স্থানীয় গবিন্দনগর জামে মসজিদের উন্নয়নে দান করে আসি।

গত ২৫ অক্টোবর জেলার দুরামারিতে শিশু সিয়াম রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতিতে চৌরাস্তামুখী হানিফ পরিবহনের গাড়ি তাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের দুরামারি বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করেন সিয়ামের বাবা ঋণগ্রস্ত ফিরোজ হাসান। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল তার। মেধাবী সন্তান সিয়ামকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। তাই শিশুটিকে ভর্তি করিয়েছিলেন জেলার সেরা স্কুল বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় পরিবারসহ এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সহপাঠীকে হারিয়ে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে বিচারের দাবিতে। পরে সুধী সমাজের উদ্যোগে মীমাংসার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সিয়ামের পরিবারকে কোনো প্রকার অভিযোগ না করার শর্তে এক লাখ টাকা অনুদান দিতে রাজি হয় হানিফ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সে মোতাবেক সিয়ামের পরিবারের কাছে টাকা নিয়ে উপস্থিত হলে তারা সম্পূর্ণ টাকাই ফিরিয়ে দেয়।

সিয়ামের বাবা ফিরোজ বলেন, আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। কারও ওপর কোনো অভিযোগ রেখে কী হবে? অভাবের সংসার হলেও কারও কাছ থেকে কখনো সাহায্য নিইনি। আমার একমাত্র সন্তান কোটি টাকার চেয়েও বেশি। তাহলে অনুদানের এ টাকা আমি কেন নেব?

সিয়ামের মা সুরাইয়া ইউনুসা বলেন, আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক। আর কোনো মা যেন আমার মতো না কাঁদে। তাই সরকার যেন এদিকে একটু খেয়াল করে।

এ বিষয়ে গবিন্দনগড় জামে মসজিদের সভাপতি আবদুর রহিম জানান, সিয়াম প্রতিদিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। তার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোক নেমে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিও অভাব-অনটনে বসবাস করে।

তিনি বলেন, মসজিদের উন্নয়নে টাকা দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। টাকাটি মসজিদ কমিটির সদস্য আরফান আলীর কাছে জমা রয়েছে। কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করার পর ঘোষণা দেওয়া হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি। নিহত শিশুর পরিবার এটার সমাধান করে নিয়েছে মর্মে একটি আপসনামা দিয়েছে। যদি পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হতো, তাহালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

নাহিদ রেজা/এনএ