শারীরিক গঠন দেখে মনে হবে সে এক শিশু। কিন্তু বয়স ১৬ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩৫ ইঞ্চি এবং ওজন ৩০ কেজি। শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবন মিয়া আর দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না। করতে পারছে না চলাফেরা। স্পষ্টভাবে বলতে পারছে না কথাও। এ অবস্থায় চরম কষ্টে জীবন কাটছে তার।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের কলসহাটি গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র মস্তু মিয়ার ছেলে জীবন মিয়া। তার মায়ের নাম নাসিমা আক্তার। তিন ভাইয়ের মধ্যে জীবন সবার ছোট। অন্য দুই ভাই সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলেও জীবন মিয়া জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।

অসুস্থ এই সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অর্থের অভাবে সন্তানের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবারটি। এ ছাড়া তার চলাচলের জন্য কিনে দিতে পারছে না একটি হুইলচেয়ার। পরিবারটির দাবি, সরকার ও সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি জীবন মিয়ার পাশে দাঁড়ান, তাহলে হয়তো তার কষ্টের অবসান ঘটতে পারে।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবন মিয়ার বাড়িতে গেলে কথা হয় তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। তারা জানান, ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করে জীবন। জন্মের পর থেকেই সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তার চিকিৎসাও করিয়েছে পরিবার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

জীবন মিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অনেকগুলো। যেমন স্বাভাবিক শিশুদের মতো বেড়ে না ওঠা, ১৬ বছর বয়সে উচ্চতা ৩৫ ইঞ্চি ও ওজন ৩০ কেজি ছাড়াও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না সে, হাঁটতেও পারে না। এমন অবস্থায় টাকার অভাবে পরিবারটি তাকে নিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না।

জীবন মিয়ার বাবা মস্তু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মূল বাড়ি বাটলাড়া গ্রামে। নিজের কোনো জায়গাজমি না থাকায় ১২ বছর ধরে কলসহাটি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। আমি খুব দরিদ্র মানুষ। মানুষের কাজকাম করে কোনো রকম জীবন চালাই। স্ত্রী (নাসিমা আক্তার), তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে অনিক মিয়া, মেজ ছেলে অফিক মিয়া ও ছোট ছেলে জীবন মিয়াকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার আমাকে একাই চালাতে হয়। অন্য দুটি ছেলে সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলেও ছোট ছেলে জীবনকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। অর্থের অভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসাটুকুও করাতে পারছি না। কিনে দিতে পারছি না একটা হুইলচেয়ারও।

জীবনের মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমার তিন সন্তানের মধ্যে একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমার জীবন প্রতিবন্ধী হলেও সে শান্ত। সে কোনো রকম অত্যাচার করে না। হাঁটাচলায় সে অক্ষম। ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। তাই তাকে গোসল করানো থেকে শুরু করে, খাওয়াদাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা সবকিছু আমাকেই করতে হয়।

তিনি বলেন, বড় ছেলেটা এসএসসি পাস করেছে। মেজ ছেলেটা এ বছর দশম শ্রেণিতে পড়ছে। জীবন মিয়াকে এলাকার একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু সে চলাচল করতে না পারায় ভ্যান গাড়িতে করে মাঝেমধ্যে তাকে স্কুলে নিয়ে যাই। সন্তানের উন্নত চিকিৎসা ও হুইলচেয়ারের জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তশালী লোকজনের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় কলসহাটি গ্রামের যুবক শেখ ইমরানুল হক জেনিস বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই জীবন মিয়াদের বাড়ি। সে নিজে নিজে চলাচল করতে না পারায় ঘরে ও বাড়ির সামনে বসে থেকেই সময় কাটায়। অন্য শিশুরা যখন খেলাধুলা করে, জীবন মিয়া তখন বসে বসে তা দেখে। কারণ, এ ছাড়া তার কিছুই করার নাই। এমন দৃশ্য দেখলে যে কারও কষ্ট লাগবে। এই কিশোরকে সহযোগিতা করতে আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিত।

রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও কলসহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমির হামজা বলেন, জীবন মিয়া জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। সে ভাতার টাকাও পাচ্ছে। এ ছাড়া আরও যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা তা করব।

কেন্দুয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবন্ধী জীবন মিয়া সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমরা তার খোঁজখবর নেব এবং তার পরিবার আবেদন করলে আমরা তাকে একটি হুইলচেয়ার প্রদানের ব্যবস্থাসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করব।

জীবন মিয়ার বিষয়ে জানতে তার মা নাসিমা আক্তারের ০১৯৪৪৪৩৫৩৪৬ (বিক্যাশ) এই নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এনএ