পঞ্চগড়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে রোগীরা
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের অনেক কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড় হিমালয়ের কন্যা নামেও পরিচিত। এ জেলায় প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় কেউ কেউ শীতের জেলাও বলে থাকেন। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমালয়ের হিম বাতাসের কারণে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে কখনও মৃদু, কখনও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে ও ঘন কুয়াশায় মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
মাঘ মাসের শীতে দিন দিন জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। তবে শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। প্রতিদিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গড়ে ১৫- ২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৷ এছাড়াও জেলার বাকি চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শুধু সদর হাসপাতালে গত তিন মাসে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজারের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। জেলার তেঁতুলিয়া, বোদা, দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছে। সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে মানুষকে শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
গত রোববার (২৪ জানুয়ারি) শীতজনিত নানা রোগে ৬২ জন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) ভর্তি হন ১৩ জন। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৪০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন জানিয়েছেন হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হোসেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, পঞ্চগড় জেলা শুধু হিমালয়লের নিকটবর্তী হওয়ায় তাপমাত্রা ওঠানামা করে। তাপমাত্রা ওঠানামার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। গত নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫২ দিন এ জেলায় সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এ জেলায় তীব্র শীত অনুভূত হয়।
রোগীর স্বজনরা জানান, হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এবং হাসপাতালে থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। তাছাড়া সুস্থ হওয়ার পর অনেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তবে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীর স্বজন হাসপাতালে সেবা ও নার্সদের অবহেলার অভিযোগ করেন। তারা প্রয়োজনে নার্সদের ডাকলেও সাড়া পাচ্ছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির জন্য তারা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, পঞ্চগড়ে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া,জ্বর ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেকে আবার বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আমরা প্রতিনিয়ত শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ এড়াতে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ে দিন দিন শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে প্রতিদিন কমবেশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বাকি যে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধসহ যাবতীয় বিষয় আমাদের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
রনি মিয়াজি/আরএআর