সকাল ৮টার আগে যেভাবেই হোক পৌঁছাতে হবে কর্মস্থলে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান অথবা পিকআপে কষ্ট করেই কর্মস্থলে ছুটছেন শ্রমিকরা। তবে অঘোষিত ধর্মঘটে সাভারে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নারী শ্রমিকরা। তারাও পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পিকআপে হলেও যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে।

শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। পরিবহন না পেয়ে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে নারীরাও ছুটছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সময়ের মধ্যে পৌঁছতে হবে অফিসে।

কাজে যোগ দিতে পিকআপে উঠেছেন লাইলি বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত লকডাউনেও অনেক কষ্ট করে কাজে যোগ দিয়েছি। আজ লকডাউন নাই কিন্তু ভোগান্তি আছেই। আমরা দুই হাত দিয়ে কাজ করে করোনার মধ্যেও অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছি। কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছু করে না। আমাদের জন্য যদি নির্ধারিত গাড়ি থাকত তাহলে ভোগান্তি থেকে বাঁচতাম। চাকরি বাঁচাতে এভাবে পিকআপে উঠতে হতো না।

পিকআপে করে অফিসগামী অপর নারী আলেয়া বেগম বলেন, একদিন কাজে যোগদানে দেরি হলে হাজিরা বোনাস ৫০০ টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হবে। তাছাড়া অফিসে লেট করে পৌঠলে নানা কৈফিয়ত দিতে হবে। এমনকি চাকরিও চলে যেতে পারে। তাই এক প্রকার চাকরি বাঁচাতেই পিকআপে উঠেছি। এখন সঠিক সময়ে অফিস পৌছতে পারলে বেঁচে যাই।

এদিকে সুযোগ পেয়ে পিকআপ চালকরাও বাড়িয়ে দিয়েছেন ভাড়া। শ্রমিকদের অভিযোগ ৫ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। রিকশাওয়ারা ভাড়া বাড়িয়েছেন ১০ টাকার ভাড়া প্রায় ৫০ টাকা।

শ্রমিক কামরুন্নাহার বলেন, আমরা কবিরপুর থেকে ইপিজেড যেতাম ১০ টাকা ভাড়ায়। কিন্তু পিকআপ ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। সুযোগ পেয়েই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। এসব দেখার যেন কেউ নাই। রিকশাওয়ালারা তো আরও বেশি সুযোগ পেয়েছেন। তারা ১০ টাকার ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে যাচ্ছেন না।

পিকআপচালক লোকমান বলেন, আমরাই শুধু লোকজনের কষ্ট বুঝি। আমরা কি এমনি এমনি যাত্রীবহন করছি। দুই চার টাকা ইনকামের জন্যই তো। তারা তো প্রতিদিন আমাদের টাকা দেন না। টাকার বিনিময়ে বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়েছি। আর আমরা কারও কাছে জোর করে টাকা নিচ্ছি না। যাদের ইচ্ছা তারাই যাচ্ছেন, যাদের ভাড়া বেশি দেওয়ার ইচ্ছে নাই তারা যাচ্ছেন না। 

এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, নারী শ্রমিকদেন জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাহলে তারা ঝুঁকি নিয়ে এভাবে পিকআপে উঠতেন না। আশা করি বিষয়টির দিকে শিল্পের মালিকরা নজর দেবেন।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রমিকরা বরাবরই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত লকডাউনেও অত্যন্ত কষ্ট করে তারা অফিস করেছেন। সেখান থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা নাই। চাকরি বাঁচাতে হলে অফিসে পৌঁছতেই হবে শ্রমিকদের। তাই শ্রমিকরা আজ নিরুপায়।

এমএসআর