‘আমি রবিউল, আমি কুষ্টিয়া জেলার মাস্তান, আমাকে কুষ্টিয়া জেলা মাস্তানির সার্টিফিকেট দিয়েছে। খোকসা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত যত লোক আছে, মাস্তান আছে, আমার হাতে চলে। ক্ষমতা দেখাতে চাইনি। কিন্তু কিছু লোক আমাকে ভালো থাকতে দিল না। ক্ষমতা কত প্রকার, এবার দেখিয়ে দেব।’

গত ২৩ অক্টোবর রাতে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে তালবাড়িয়া ইউনিয়নের একটি এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামেন নেতারা। সেখানে বক্তব্যে ওপরের কথাগুলো বলেন যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম।

এ সময় ফেসবুক লাইভ চলে। পরে কথাগুলো রেকর্ড করা ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নেটিজনরা শেয়ার করলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নে রবিউল ইসলামের বাড়ি। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিফ আহাম্মেদ সোহান। আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হান্নান মন্ডল।

১১ নভেম্বর তালবাড়িয়াসহ মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা।

ভিডিওর বক্তব্যে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হানিফ ভাইয়ের বাসায় বসে একসময় ঢাকার নেতৃবৃন্দ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কী কী পারেন? আমি বললাম, আমি রবিউল কুষ্টিয়ায় বসে থাকব, কাল যদি মনে করেন ১০ হাজার লোকের সমাবেশ করব, আমি করে দেখাতে পারি। আর কী পারেন, আমি বললাম আমার কিছু ছেলেপেলে আছে। দুই-তিন ঘণ্টা থানার সামনে লড়াই করতে পারি। লড়াই করে থানাকে হটায়ে দিতে পারি। আমি রবিউল এটা পারি। আমি সেই রবিউল। আবেগ দিয়ে চলিনি, আবেগ দিয়ে চলে না, আবেগে কোনো কাজ হয় না।' 

তিনি আরও বলেন, ‘হিজড়া হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, কারও সঙ্গে কোনো কটূক্তি, খারাপ আচরণ করব না। আমার ক্ষমতা কাউকে দেখাব না। এবার বুঝবি ক্ষমতা কত প্রকার কী কী। এবার দেখিয়ে দেব। নির্বাচনে হান্নান মন্ডল একশ ভাগ হারবে। অহংকার ও পাপে ডুবে গেছে তারা। এর ফল তারা ১১ তারিখে পাবে। বক্তব্যের মাঝে তাদের মাঠ ছাড়া করব।’

হুংকার দিয়ে যুবলীগের এই নেতা বলেন, ‘আমাকে বারুইপাড়া, বহুলবাড়িয়ায় সময় দিতে হয়। আমি একটা হুংকার দিয়েছিলাম বারুইপাড়া ইউনিয়নে। আমাকে বাদে তারা মিটিংই করছে না। এখন সেখানকার নেতারা আমাকে ছাড়া প্রচারণা চালাচ্ছেন না, তারা আমাকে ডাকছেন।’

সাবেক চেয়ারম্যান আরিফের উদ্দেশে রবিউল বলেন, ‘আমি আরিফকে বলেছিলাম এটা আমার শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমি অনেক খেলা খেলব, তুমি এই নির্বাচনে লড়ো না। আমার এক ছেলে এসে বলল, আরিফ তার বাড়ির সামনের একটি ক্যাম্প করতে দেবে না, আমার এক ছেলে উঠিয়ে নেবে। আমি বললাম, আরিফকে আমি প্রয়োজনে উঠিয়ে নেব, ওকে বাড়ি থেকেই বের হতে দেব না। আমি যদি মনে করি, কালই এটা করতে পারি। ওকে কুষ্টিয়া শহরে আসতে দেব না, তাও পারি। প্রয়োজনে আলফার মোড়ে ওর অফিসে আসা বন্ধ করে দেব। দেখি ওর কোন বাপ ঠেকায়।’

এদিকে কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম ভিডিওর বক্তব্য তার বলে স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এলাকায় দলীয় প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, মারধর করেছেন। তাই তিনি সেদিনের সভায় বলেছেন, তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি, জেলার যুবকরা সব তার সঙ্গে। তারপরও তিনি শান্ত আছেন, অথচ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাই তিনি শান্ত থাকার জন্য বলেছেন।

তালবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হান্নান মন্ডল বলেন, বক্তব্যটি আমিও শুনেছি। এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক না। ওই বক্তব্যের পর গত ১০ থেকে ১২ দিন আমি মাঠে নামতেই পারিনি। শুক্রবার কোনোমতে নেমেছিলাম।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিফ আহাম্মেদ সোহানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হান্নান মন্ডলের সমর্থকদের একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষই পরস্পরের বাড়িঘরে হামলা করেছে। পুলিশ ও র‌্যাব বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। হান্নান মন্ডলকে গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সে জন্য মিরপুর থানা পুলিশ কাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেওয়া হবে। আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে পরিবেশ শান্ত রাখার জন্য বলা হয়েছে।

রাজু আহমেদ/এনএ