পরিবহন ধর্মঘটে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর দুই পাড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় লাখ লাখ মানুষ  ভোগান্তিতে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা এ ধর্মঘটে পথে পথে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সংযোগস্থল কাঁচপুর সেতুতে বাস বা যে কোনো পরিবহন পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শত শত মানুষ। 

শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিমরাইল মোড়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, পিকআপ ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা ভ্যান গাড়িতেও বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। বাসে উঠতে না পারলেও দূরের গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা প্রাইভেটকার, পিকআপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করছেন। এই সুযোগে ভাড়া বেশি নিচ্ছেন চালকরা। 

এদিকে গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। তবে শনিবার পুলিশের সাহায্যে কিছু সংখ্যক বিআরটিসি বাস ঢাকায় ছেড়ে গেছে। 

সাইনবোর্ড এলাকায় অফিসগামী বিভিন্ন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগ আর ক্ষোভের কথা জানা গেছে। ব্যবসায়ী রোমেল হায়দার বলেন, সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। ডিজেলের দাম কমানোর দাবি থাকলে সেটা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা করা যেত। কিন্তু তারা সেটা না করে ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছেন।

তিন বছরের নাতিকে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষারত কুমিল্লার হাজেরা বেগম বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাইনি। কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। 

শিমরাইল বাস কাউন্টারে বেশ কয়েকজন যাত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তারা যখন-তখন ধর্মঘট ডাক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। ধর্মঘট ডাকার আগে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি তাদের মাথায় রাখা উচিত। অন্য সময় মহাসড়কে যানজট লেগে থাকত। এখন মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা। 

শিমরাইল কাউন্টারে বিআরটিসি বাসের সুপারভাইজার সুরুজ মিয়া জানান, ধর্মঘটের মধ্যেও তারা আগের ভাড়ায় যাত্রীদের পরিবহন করছেন। 

রিতা বেগম নামে আরেক যাত্রী জানান, তিনি সিএনজিতে করে গ্রামের বাড়ি আড়াইহাজারে যাবেন। কিন্তু সিএনজিচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। 

বিষয়টি স্বীকার করে ফরহাদ মিয়া নামে এক সিএনজিচালক জানান, পরিবহন ধর্মঘট থাকায় সিএনজিচালকরা ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছেন। 

মহাসড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম জানান, পরিবহন ধর্মঘট হলেও কিছু বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলছে। 

শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মশিউর রহমান বলেন, ধর্মঘটের কারণে মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অল্প কিছু বাস ও ট্রাক চলাচল করছে। বাসগুলো যে যার মতো করে ভাড়া নিচ্ছে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বেগ বলেন, ধর্মঘটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ আছে। তবে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে।

রাজু আহমেদ/আরএআর