হাড় কাঁপানো শীতে পানিতে কাজ করছেন পঞ্চগড়ের নারী শ্রমিকরা

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও বেড়েছে শীতের প্রকোপ। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিম বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত, কুয়াশা, হিমেল বাতাস আর শৈত্য প্রবাহের অভিশাপে দিশেহারা তারা।

এ জেলায় পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও মাঠে ঘাটে কাজ করেন। সংসারে হাল ধরতে মাঘের হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে পুরুষদের পাশাপাশি বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন পঞ্চগড়ের নারী শ্রমিকরা। তবে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে নারী শ্রমিকরা তাল মিলিয়ে কাজ করলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক। তারপরও জীবিকার তাগিদে কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে ঠান্ডা পানিতে কাজ করছেন তারা। 

জানা গেছে, জেলায় ভারী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় জেলার জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ পাথর, চা শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করেন। নারীরা সংসারের কাজ শেষ করে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হন এবং মৌসুমভেদে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একই কাজ করে থাকেন। তবে মজুরির ক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। পুরুষদের চেয়ে নারীরা ৫০-১০০ টাকা কম পেয়ে থাকেন।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নারীদের ঠান্ডা পানিতে বোরো ধানের চারা উত্তোলন ও রোপণ করতে দেখা গেছে।

মানুষ গরম কাপর পরিধান করেও যেখানে শীতের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সেখানে এ সকল নারী শ্রমিকদের দিন কাটে বরফের মতো ঠান্ডা পানিতে। আর এভাবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে বোরো ধানের চারা উত্তোলন ও রোপন। এভাবেই চলছে তাদের সংসার।

এ সকল নারী শ্রমিকরা জানান, তারা প্রতিদিন এভাবে ঠান্ডা পানিতে কাজ করেন। অনেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হলেও জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হয়। প্রতিদিন তারা ২শ থেকে ২২০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। 

তারা দাবি করে বলেন, তারা কখনও সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায় না। এমনকি শীত মৌসুমে অনেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তাদের কপালে জুটছে না শীত নিবারণের জন্য একটি কম্বল। আর এভাবেই চলছে জীবনযুদ্ধে হার না মানা এ সকল নারী শ্রমিকের জীবন। 

কথা হয় বোদার ময়দান দিঘী ইউনিয়নের খুদিনুরি এলাকা থেকে কাজ করতে আসা নারী শ্রমিক রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কাজ না করলে চুলায় আগুন জ্বলে না। না খেয়ে থাকতে হয়। যতই ঝড় বাদল হোক বা মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো শীত হোক আমাদের কাজে বের হতেই হয়। কাজ না করলে তো পেটে ভাত যাবে না।

একই কথা বলেন সাহেদা খাতুন। তিনি মনের কষ্টে কাজ বন্ধ না করে বলতে থাকেন, আমরা গরিব। সারাদিন ঠান্ডা পানিতে কাজ করতেছি। ঠান্ডা পানিতে কাজ করার কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপরও কাজ করতে হচ্ছে। আমরা কী গরিব মানুষ না? আমরা কী কম্বল পাওয়ার যোগ্য না? আমাদের কেউ কোনো সহযোগিতা করছে না।

ওই এলাকার কৃষক মনজাজুল আলম জানান, বর্তমানে বোরো ধানের মৌসুম চলছে। আমরা চারা রোপণ করতে শুরু করেছি। অনেক নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করে আমাদের মাঠে। শীতকাল হওয়ায় ঠান্ডা পানিতে কাজ করতে হচ্ছে। তাদের জন প্রতি ২২০ টাকা হাজিরা ও দুই বেলা দেওয়া হচ্ছে। 

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, আমরা গরিব, অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। পাথর, চাসহ নানা পেশাজীবীর কাউকে বাদ দেওয়া হবে না, পর্যাক্রমে সবাই পাবেন। তবে তিনি সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

রনি মিয়াজী/এসপি