আড়াই বছর বয়স মুস্তাকিমের। দেখতে দিব্যি সুস্থ। হেসে-খেলে দিন কেটে যায়। বোঝার উপায় নেই শিশুটির হার্টে একটি ছিদ্র রয়েছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে বাঁচানো সম্ভব হবে না তাকে। তাই ঘুম নেই বাবা-মায়ের চোখে। কীভাবে জোগাড় করবেন এত টাকা, কীভাবেই বা করাবেন চিকিৎসা?

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী হাওলাদার ও মুসলিমা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে মুস্তাকিম হাওলাদার। জন্মের ২৩ দিন পরেই শিশু মুস্তাকিমের হার্টে সমস্যা ধরা পড়ে। সেই থেকে খুলনা-বাগেরহাটের বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার দেখালেও সুস্থ হয়নি সে।

সর্বশেষ খুলনা সিটি মেডিকেল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর ও অপারেশনের পরামর্শ দেয়। কিন্তু দরিদ্র পিতা-মাতার পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে শিশুটির পরিবার ও স্থানীয়রা।

মুস্তাকিমের বাবা আলী হাওলাদার বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা অসুস্থ অনেক। খুলনায়-বাগেরহাট অনেক জায়গায় ডাক্তার দেখাইছি। আমি দিনমজুরের কাজ করে খাই। যে টাকা আয় করি তাই দিয়ে সংসার চালানোই দায়। তবু ধার দেনা করে এতদিন চিকিৎসা চালাইছি। কিন্তু এখন ডাক্তার বলতিছে ঢাকায় নিয়ে হার্টে অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু আমাদের তো সেই সামর্থ্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেছি। এখনো ১ লাখ টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা কীভাবে জোগাড় করব? তা জানি না। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো আল্লাহর রহমতে আমার বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে যাবে।’

আরিফা বেগম নামের এক প্রতিবেশী জানান, ‘মোহাম্মদ আলী আমাদের প্রতিবেশী। ওর ছেলে মুস্তাকিম খুবই অসুস্থ। দরিদ্র মোহাম্মদের পক্ষে এই ব্যয় বহন সম্ভব নয়। আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু সহযোগিতা করেছি। কিন্তু শুনেছি ঢাকায় নিতে হবে। আমরা চাই সমাজের বিত্তবানরা শিশুটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুক।’

স্থানীয় দোকানদার রুহুল আমিন বলেন, ‘মোহাম্মদ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। ওর এমন কোনো সহায় সম্পদও নেই যে তাই দিয়ে বাচ্চার চিকিৎসা করবে। সরকারি কত সাহায্যেই তো আসে আবার ধনী মানুষেরাও অনেক সাহায্যে সহযোগিতা করে। তাদের মধ্যে কেউ যদি বাচ্চাটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় তাহলে আশা করি আল্লাহ চালে মুস্তাকিম সুস্থ হয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুস্তাকিমের মা মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই বাচ্চাটা অসুস্থ। আমার স্বামী অনেক কষ্ট করে চিকিৎসা করায়। এখন ডাক্তার বলিছে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের তো সেই সামর্থ্য নেই। অপারেশনের এত টাকা আমরা কই পাব।’

ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান খান জানান, স্থানীয়ভাবে মোহাম্মদ আলীর শিশু পুত্রকে আমরা সহায়তা দিয়েছি। কিন্তু চিকিৎসার জন্য এ সাহায্যে নিতান্তই অপ্রতুল। এই অবস্থায় বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, মুস্তাকিমের অসুস্থতার বিষয়টি শুনেছি। পরিবারকে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করতে বলেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মের মধ্যে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। কেউ সাহায্য করতে চাইলে মোস্তাকিমের বাবা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে এই নম্বরে (০১৯১৪-০৩৯৭৪৫) যোগাযোগ করতে পারেন।

তানজীম আহমেদ/এমএসআর