৯ বছর বয়সী শিশু সানি ইউটিউব মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, পিসি বিল্ড গাইড, ওয়্যারলেস হ্যাকিংসহ ৪০ ধরনের আধুনিক প্রোগ্রাম বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে। দুই বছর ধরে ইউটিউব থেকে বিভিন্ন কোর্সের ভিডিও দেখে দেখে একাগ্রচিত্তে এই সফলতা অর্জন করে সে। এখন এথিকেল হ্যাকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সুনামগঞ্জ শহরের খুদে শিক্ষার্থী মো. আনিসুর বেগ সানি।

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের বাসিন্দা আসকর আলী বেগ ও রওশন আরা বেগমের পাঁচ সন্তানের সবার ছোট সানি। আসকর আলী বেগ পুলিশের চাকরি শেষে অবসরে আছেন। সুনামগঞ্জ সদরে পরিবারসহ বসবাস করছেন তিনি।

সানি নৈতিক হ্যাকার হওয়ার জন্য অনেক কিছুই নিজের আয়ত্তে এনেছে। শহরের আবাবিল নুরানি শিশু একাডেমির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সানি ঢাকা পোস্টকে জানায়, ইউটিউব মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, পিসি বিল্ড গাইড, ওয়্যারলেস হ্যাকিং, সাইবার সিকিউরিটি, ওয়েব ডেভেলপিং, ফটো এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েবসাইট হ্যাকিং, ক্রিয়েট ভাইরাস, ফেসিং ফেজ হ্যাকার, ওয়েবসাইট অ্যাডমিন প্যানেল ফাইন্ডিং, কম্পিউটার রেজিস্ট্রার এডিট, স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ, সেইফ ওয়েবসাইট ফরম হ্যাকিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, লঘু ডিজাইনসহ ৪০ ধরনের কম্পিউটার ও অনলাইন কাজের দক্ষতা আয়ত্ত করেছে সে।

সানি বলে, যারা অসাধু হ্যাকার, তাদের মোকাবিলা করতে কাজ করে নৈতিক হ্যাকাররা। আমি নৈতিক হ্যাকার হতে চাই। যেসব ওয়েবসাইটে দুর্বলতা আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করে দেওয়ার কাজ শিখছি আমি। যা দিয়ে ওয়েবসাইটের অনৈতিক হ্যাকারদের মোকাবিলা করব আমি।

সানি সবাইকে পরামর্শ  দিয়ে বলে, ফেসবুক নিরাপদ রাখার জন্য টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন অন করতে হবে। লগইন অ্যালার্ট অন করতে হবে। ফেসবুকের সঙ্গে মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে ই-মেইল যুক্ত করতে হবে। কোনো অপরিচিত লিংকে ক্লিক করবেন না। অনেক লিংকে নানা অফার দেওয়া থাকে, এটি ক্লিক করলে লটারি জিতবেন, ৫০০ টাকা পাবেন এসব লিংক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকবেন।

এসব লিংকে ক্লিক করলে মেলর নামের একজাতীয় ভাইরাস আপনার ফোনে ঢুকে আপনার সব অ্যাকাউন্টের তথ্য হ্যাকারকে পৌঁছে দিতে পারে। কেউ ফেসিং লিংক পাঠালে প্রথমে ইউআরএল চেক করে দেখবেন ফেসবুক ডটকম লেখা আছে নাকি অন্য কোনো ওয়েবসাইট লেখা রয়েছে। অন্য কোনো ওয়েবসাইট থাকলে সেখানে ক্লিক করে ফাঁদে পড়তে পারেন।

তার মতে, অনৈতিক ফেসবুক হ্যাকারদের থেকে সুরক্ষা পেতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, টু-স্টেপ ভ্যারিফিকেশন চালু ও অচেনা ওয়েবসাইট ক্লিক থেকে বিরত থাকতে হবে।

সানি বলে, ফোন ক্লিনার, মেমোরি ক্লিনার নামে অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এসব সফটওয়্যার ইনস্টল করলে ফোনের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, গ্যালারি, কন্ট্রাক্ট নম্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যায় অনৈতিক সফটওয়্যার মালিক বা অনৈতিক হ্যাকারের কাছে। যেহেতু ফোন সেটের সঙ্গে বাইডিফল্ট অ্যান্টিভাইরাস থাকে, সে জন্য তৃতীয় পক্ষের কোনো অ্যাপস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।

সানির বড় ভাই মুনসুর বেগ জনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় বাসায় ওয়াই-ফাই সংযোগ আনি। পরদিন থেকে সানি কম্পিউটারে ডুবে থাকত। শুরু হয় সারাদিন বসে থাকা। প্রথমে ভয় পেতাম, এখন দেখছি সে ওখানেই অসাধারণ মেধাবী হয়ে উঠেছে। তার এই মেধা হয়তো একসময় তার নিজের এবং দেশের বা পৃথিবীর মানুষের জন্যও কাজে লাগতে পারে।

একই ধরনের মন্তব্য করলেন সানির বাবা আসকর আলী বেগ ও মা রওশন আরা বেগ। তারা বলেন, সানির এই প্রতিভাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। স্থানীয় বা জাতীয়ভাবে যদি সে সহযোগিতা পায়, তাহলে সানি তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

এনএ