কোমর ভেঙে যাওয়ার কারণে হাঁটতে না পাড়ায় স্বামীর ঘাড়ে উঠে পঞ্চগড়ে মানুষের কাছে সাহায্য তুলে বেড়ানো দম্পতির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে সেই অসুস্থ দম্পতির ছবি দেখে হুইলচেয়ার উপহার দিলেন শেখ মোস্তাফিজ নামে এক পুলিশ সদস্য।

রোববার (নভেম্বর) বিকেলে আক্তারী বেগমের (৪৫) ও ইউনুস আলী (৬০) দম্পতির কাছে ওই পুলিশ সদস্যের হয়ে হুইলচেয়ার ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন রাশেদুজ্জামান, সম্রাট হোসাইন ও আবু নাঈম নামে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী।

জানা গেছে, ইউনুস আলী ও আক্তারী বেগম নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় বসবাস করলেও কয়েক মাস ধরে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে থাকেন। তারা জানান, বড় মেয়ের বিয়ের জন্য অর্থ যোগার করতেই তারা পঞ্চগড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আসছেন। তারা সারাদিন ভিক্ষা করে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন রাতযাপন করছেন।

অন্যদিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ রংপুর সদর পুলিশ কোর্টে এটিএসআই পদে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এটিএসআই পদে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, দুই মেয়ে নিয়ে আক্তারী বেগম ও ইউনুস আলীর সংসার। একসময় তিনি দিনমজুর ও স্বামী হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আর দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে লেখাপড়া করে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং বড় মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। কয়েক মাস আগে হঠাৎ করে আক্তারী বেগম পিছলে পড়ে কোমর ভেঙে গেলে তার হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়।

স্ত্রীর পেছনে স্বামীর যা কিছু ছিল তা চিকিৎসার খরচ করেও তাকে ভালো করতে পারেননি। অন্যদিকে তাদের বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত হওয়ার বিয়ে দেওয়ার জন্য বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। ফলে হুইলচেয়ার কেনার সামর্থ্য না থাকায় স্বামী ইউনুস আলীর কোলে ও ঘাড়ে উঠে আক্তারী বেগমসহ তারা মানুষের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ান।

এদিকে কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে কোলে নিয়ে স্বামী হেঁটে যাচ্ছে এমন ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি দেখতে পান পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ। পরে কয়েক দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় তাদের খুঁজে পান এবং রংপুর থেকে নিজে একটি হুইলচেয়ার কিনে তিনি পাঠিয়ে দেন পঞ্চগড়ে।

আক্তারী বেগম বলেন, একসময় স্বামীসহ দিনমজুরের কাজ করে আমাদের চলতো সংসার। কিন্তু কয়েক মাস আগে পিছলে পড়ে কোমর ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমার হাঁটাচলা। হুইলচেয়ার কেনার টাকা নাই, মেয়ের বিয়ে দেব, তাই ভিক্ষা করার জন্য জেলায় জেলায় ঘুরি। আজ যে পুলিশ ভাই হুইলচেয়ার দিয়ে সহযোগিতা করল, তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

স্বামী ইউনুস আলী বলেন, অসুস্থ স্ত্রীকে কোলে নিয়ে আমি ভিক্ষা করি। আমার সার্মথ্য না থাকায় তাকে হুইলচেয়ার কিনে দিতে পারিনি। শেখ মোস্তাফিজ ভাই যে উপকার করল, তার ঋণ আমি কোনো দিন পরিশোধ করতে পারব না।

পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ বলেন, আমি গর্বিত এমন একজন অসুস্থ ও অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়াতে পারে। আমি অনুরোধ করব সবাই যেন ওই অসহায় দম্পতির পাশে থেকে সহযোগিতার করার।

রনি মিয়াজী/এমএসআর