ঘড়ির কাটায় তখন ভোর ৬টা। মঙ্গলবারের (০৯ নভেম্বর) ঘন কুয়াশায় ডুবে আছে কাউয়াদিঘি হাওর। হাওরের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পাম্প হাউজ। এই পাম্প হাউজ ঘিরে গড়ে উঠেছে কাশিমপুরবাজার। কাউয়াদিঘি হাওরের বিল ও নালা থেকে মাছ শিকার করে নিয়ে এসছেন জেলেরা। আর হাওরপাড়ের এই কাশিমপুরবাজারে এখন নিলাম হবে। তাই বাজারে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতা জেলেরা।

ভোরে কাশিমপুরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি রুই, বোয়ালসহ ছোট ছোট প্রজাতির মাছে নিয়ে এসেছেন জেলেরা। আর বাজারের পরিচালকরা এই মাছ নিলাম করছেন। নিলামে বিভিন্ন ধরনের দাম হাঁকা হচ্ছে। যার মনের মতো দামের সঙ্গে মিলছে তিনিই কিনে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের মাছ।

জানা গেল, এই কাশিমপুরবাজারে যে নিলাম হয় সেখান থেকে মাছ কিনে জেলেরা শহরে ভ্রমণ করে বিক্রি করেন অথবা বাজারে বসেন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় রাজনগরের ইসলামুপরের বাসিন্ধা জেলে ছনু মিয়ার।

তিনি বলেন, ‘আজ ২০ বছর ধরে মাছ বিক্রি করছি। আমরা এই বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে শহরে বিক্রি করি। কাউয়াদিঘি হাওর থেকে এখানে মাছ আসে। মাছের দাম দর নিলামের ওপরে নির্ভর করে। কাউয়াদিঘি হাওরের মাছই হচ্ছে আমাদের জীবন জীবিকা।’ 

মাছ নিয়ে আসা জেলে সমুজ মিয়া বলেন, ‘রাতভর কষ্ট করে মাছ ধরি হাওরে। আমার দেখা মতে পঞ্চাশ বছর ধরে এই হাওরে মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ আমরা সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করি। আবার বাজারে নিলামেও বিক্রি করি। এই কাউয়াদিঘির মাছে বহু গরিবের জীবন চলে।’

তবে সবুজ মিয়া বুকের ভেতর একটি চাপা কষ্ট আছে সেই কষ্টের কথাও জানালেন ঢাকা পোস্টকে। সমুজ মিয়া বলেন, ‘কিছু লোক এই হাওরের মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। কাউয়াদিঘি হাওর ফিশারি হয়ে যাচ্ছে। উত্তর দিক, পশ্চিম দিক সবদিকে মানুষ ফিশারি করে দখল করে নিচ্ছে। আমাদের মাছ ধরার কোনো জায়গা নেই। আর কদিন পরে আমাদের এলাকার মানুষ ডাকাতি করতে হবে।’

জেলেরা জানায়, এ বছর কাউয়াদিঘিতে বড় রুই, বোয়াল, আইড়, কমন কার্প, মৃগেল মাছের আধিক্য বেশি। সঙ্গে অন্য জাতের দেশি মাছও ধরা পড়ছে। এছাড়া চাপিলা, টেংরা, মলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে। ছোট ও বড় মাছ আলাদা করে বিক্রি করা হচ্ছে ঘাটে। এ বছর পাবদা, চিতল, ফলি, কালবাউসসহ কিছু মাছ আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওরকে মাছ পাখি আর ফসলের ভান্ডার বলা হয়। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুরা, একাটুনা ইউনিয়ন এবং রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর, পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ ইউনিয়ন নিয়ে এই হাওরাঞ্চল। হাওরের বেশির ভাগ পড়েছে রাজনগরে।

শুকনা মৌসুমে বোরোতে সেচ প্রদান এবং বর্ষায় হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৮৩ সালে মনু নদী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত কাশিমপুরে পাম্প হাউজ স্থাপিত হয়। এই পাম্প হাউজকে গিয়ে পাশ্বেই গড়ে ওঠে বাজার। যুগ যুগ ধরে এই বাজারে নিলামে মাছ বিক্রি করে বেঁচে আছেন এখানকার জেলে পরিবার।

বাজারের মাছ নিলামের পরিচালক আব্দুল কাদির ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বাজারে ৮ বছর ধরে মাছ নিলাম করছি। কোনোদিন পনেরো হাজার আবার কোনোদিন বিশ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। পানির সঙ্গে মাছের সম্পর্ক। পানি না থাকলে মাছও হাওরে পাওয়া যায় না।

মৌলভীবাজারের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কাউয়াদিঘি হাওরের জেলেরা মাছ ধরে এখানকার জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশি মাছ চাষ হয়। অনেক বিল আছে এগুলো সরকার ইজারা দেয়।

এমএসআর