দ্বীন ইসলাম

করোনাকালে লকডাউনে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন ফুচকা বিক্রেতা দ্বীন ইসলাম (৪১)। স্থানীয় ইউপি সদস্যের (মেম্বার) কাছে বারবার বলেও তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। তখন থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন নিজেই মেম্বার হবেন এবং এলাকার মানুষকে চরম মুহূর্তে সহযোগিতা করবেন। এবার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে লড়ছেন দ্বীন ইসলাম। 

মনোনয়ন ক্রয় ও জমা থেকে শুরু করে নিজেই প্রচারণা চালিয়েছেন। তার প্রতীক টর্চলাইট। ১১ নভেম্বর বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। 

সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার মো. মোস্তফার দ্বিতীয় ছেলে দ্বীন ইসলাম। তিনি ফুচকা বিক্রেতা। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কানাইনগর পশ্চিমপাড়া এলাকায় তার বসবাস। সহজ-সরল ও বিনয়ী দ্বীন ইসলাম ফুচকা বিক্রি করে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। রাজনীতি কিংবা ঝগড়া বিবাদে না জড়ানো এবং মুখে সদা হাসি লেগে থাকায় ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় তিনি। 

তবে দ্বীন ইসলামের অভিযোগ, তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি। 

দ্বীন ইসলাম বলেন, করোনায় লকডাউনের শুরুতে আমার ফুচকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। তাই সাহায্য-সহযোগিতার জন্য স্থানীয় মেম্বারদের কাছে যাই। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনিভাবে আরও অনেকেই সাহায্য না পেয়ে ফিরে গেছে। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি মেম্বার নির্বাচন করব, এসব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াব। যাতে কাউকে না খেয়ে থাকতে না হয়। এজন্য আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব বলেন, লোক হিসেবে দ্বীন ইসলাম ভালো। তার উদ্দেশ্যও ভালো। যদি মানুষ তাকে ভোট দেয় তাহলে সে মেম্বার পদে পাস করবে। 

জানা গেছে, দ্বীন ইসলাম প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আর বিকেলে প্রসন্ননগর ও কালীনগর এলাকায় ফুচকা বিক্রি করেন। ফুচকা বিক্রি করেই তার সংসার চলে। ফুচকা বিক্রি করে জমানো টাকা দিয়ে বাবার জমিতে পাঁচ বছর আগে ঘরে তুলে তিনি বসবাস করছেন।

দ্বীন ইসলাম বলেন, আমার কেউ নাই, কিন্তু আল্লাহ আছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া ও প্রচারণা সব আমি একাই করছি। দশজনে দশ রকমের কথা বলে। কেউ সমর্থন করে আবার কেউ অবহেলা করে। মূলত ফেরিওয়ালা মেম্বার প্রার্থী হয়েছি দেখে অবহেলা করে। টাকা থাকলে কেউ এটা করতো না। এ ওয়ার্ডে আমিসহ পাঁচজন মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। কয়েকজন প্রার্থী চেয়েছেন এলাকার মাতব্বর ও মুরব্বিদের দিয়ে আমাকে বসিয়ে দিতে। তারা আমাকে নানান কথা বলেছেন। আমাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। কিন্তু আমি সরে যাইনি। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।

দ্বীন ইসলামের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, প্রথমদিকে আমি তাকে অনেকবার বলেছি নির্বাচন করার দরকার নেই। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি। আমার স্বামীর মনটা ভালো। আল্লাহ রহমত করলে তিনি পাস করবেন।

রাজু আহমেদ/আরএআর