দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রংপুরের পীরগাছা ও পীরগঞ্জ উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

দুই উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তবে দলীয় প্রতীকে কোথাও বিএনপির প্রার্থী নেই। যদিও পীরগাছা ও পীরগঞ্জের ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র সাতটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে জাতীয় পার্টি। দুই উপজেলায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ে এগিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক দল। ১৮ ইউনিয়নের ১৫টিতেই রয়েছে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটারদের ভোট প্রদান করতে দেখা গেছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। 

পীরগাছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত কেন্দ্রের চেয়ে বাইরে ভোটার উপস্থিতি বেশি। তবে তারা বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থনে স্লোগান দিয়ে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে চেষ্টা করছেন। অনেক কেন্দ্রেই পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। তবে কোথাও দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি। 

প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পীরগাছায় অন্তত অর্ধশত ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রঞ্জু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভালো রয়েছে। কোথাও কোনো ঝামেলা হয়নি। এ রকম পরিবেশে কোনো বাধা ছাড়া ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে লাঙ্গলের বিজয় নিশ্চিত।

রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, দ্বিতীয় ধাপে পীরগাছা উপজেলার আটটি এবং পীরগঞ্জ উপজেলার ১০টিসহ ইউপিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১ হাজার ১০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮৭ জন, সাধারণ সদস্য ৭৫৮ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ২৫৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। 

তিনি আরও জানান, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন এজন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে রয়েছেন চারজন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য। 

এছাড়া দুই উপজেলায় দুজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও দুজন সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশের মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাবের তিনটি টহল টিম এবং তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মাঠে কাজ করছেন।

এদিকে পীরগাছা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শোয়েব সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলার পারুল, ইটাকুমারী, অন্নদানগর, ছাওলা, তাম্বুলপুর, পীরগাছা, কৈকুড়ি ও কান্দি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলছে। এই আটটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য (নারী) পদে ১২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

আট ইউনিয়নের মোট ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬৬ জন। আট ইউনিয়নের ১১৭ ভোটকেন্দ্রের ৬২৩ বুথে ভোট প্রদান করছেন ভোটাররা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টসহ ১ হাজার ৯৮৬ জন ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তা।

অন্যদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, সকাল ৮টা থেকে উপজেলার চৈত্রকোল, ভেন্ডাবাড়ী, বড়দরগাহ, কুমেদপুর, মদনখালী, টুকুরিয়া, শানেরহাট, পাঁচগাছি, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সেখানকার ৯৯টি ভোটকেন্দ্রের ৫৭০টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন ভোটাররা। 

পীরগঞ্জের ১০ ইউপিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৯৪৩ জন। আর নারী ভোটার ৯৭ হাজার ৮৫৯ জন। এবার সেখানে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪২২ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য (নারী) পদে ১৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি