মেহারন দালালবাড়ির পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মেহারন দালালবাড়ি। এটি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। অনেকেই অবাক হবেন, এই একটি ওয়ার্ডে দেড় কিলোমিটারজুড়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষের বসবাস। ৭০০ পরিবার এখানে একত্রে বসবাস করেন। যারা সবাই সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী।

এ ছাড়া এই ওয়ার্ডেই ২৩শ ভোটার রয়েছেন। যাদের ভোটের মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকেন। মেহারন দালালবাড়িতে একটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, বাজারসহ দোকানপাঠ রয়েছে। নারায়ণপুর বাজার থেকে দালালবাড়িতে আসতে প্রায় ৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে।

দালালবাড়ির ভবন আম্বিকা ও দ্বারকাপুরি

মেহারন দালালবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে জমিদারদের দোতলা দুটি ভবন। যা কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় জমিদার বংশের বসবাসের মাধ্যমে শুরু হয় এই দালালবাড়ি।

দোতলা ভবন দু’টিতে এখনও জমিদারের বংশধররা বসবাস করে আসছেন। একটি ভবনের নাম দ্বারকাপুরি ও অপরটির নাম আম্বিকা। ভবনগুলো নির্মাণ করা হয় ১৩৩৫ ও ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ জেলে, কৃষক ও ব্যবসায়ী।

এদিকে দালালবাড়ির চারদিক ঘিরে রয়েছে ফসলি জমি। এই বাড়ির কাছাকাছি নেই অন্য কোনো বাড়ি। ফলে এই বাড়ি উপজেলার সকলের কাছে খুব পরিচিত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এখানকার মানুষ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বাড়িটির প্রধান প্রবেশ সড়কটিই বেহাল। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির চারপাশ কাদা পানিতে টইটুম্বুর থাকে।

এক সময় এই দালালবাড়িতে যেতে হলে নৌকা ছিল একমাত্র ভরসা। বর্তমানে এই সড়কটি আধা পাকা রাস্তা হলেও পুরো রাস্তা ভাঙা। কোথাও কোথাও মাটি ধসে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এত জনবহুল একটি বাড়ির জন্য নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত দালালবাড়ির মানুষ। পুরো বাড়িটি ঘিরে একটি স্বর্ণের দোকান, একটি  সেলুন, দুইটি ফার্নিচারের দোকান, ২টি মোবাইল সার্ভেসিং ও ৪টি মুদি দোকান রয়েছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত দালালবাড়ির মানুষ

ব্যবসায়ী উত্তম কুমার ও শিক্ষার্থী বাধন চন্দ্র দাস বলেন, ছোট একটি বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বর্ষার সময় পুরো বাড়ি কাদা হয়ে থাকে। তখন চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় করা খুব জরুরি। এখানকার শিক্ষার্থীরা অনেক দূরে গিয়ে লেখাপড়া করতে হয়।

দালালবাড়ির বাসিন্দা একারশী ও পারবতী বলেন, নারীদের খুব কষ্ট করে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। গর্ভাবস্থায় বেশি দুশ্চিন্তা থাকে। রাস্তা খারাপ থাকার কারণে কোনো গাড়ি ভেতরে আসতে চায় না। কাছাকাছি একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকও নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি এখানে একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক তৈরি করে দেওয়ার জন্য।

জমিদার পরিবারের সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রার্থী উত্তম কুমার দাস দালাল (জমিদার) বলেন, আমাদের বংশধররা এখানে অনেক জমি দান করেছেন। এখানে একটি স্কুলও নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত ভবনে রয়েছে। নতুন করে একটি বিদ্যালয় করেছে কিন্তু ভবনের পরিসর ছোট হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা ঠিক মতো লেখাপড়া করতে পারছে না। 

পরিবার হিসেবে বাড়িটির জায়গা খুবই ছোট। এ কারণে ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান সব বাড়ির মধ্যেই। আমাদের এখন জরুরি প্রয়োজন বাড়ির একটি রাস্তা ও স্বাস্থ্য ক্লিনিক। প্রশাসন আমাদের প্রতি একটু নজর দিলে এই ওয়ার্ডের মানুষ আরেকটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেহারন দালালবাড়ির বিষয়ে আমরা খবর নিচ্ছি। সেখানে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

এমএসআর