চিলাহাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে দুই বছর তিন মাস আগে। নতুন এই স্টেশনের জন্য প্রস্তুত আছে জনবল ও প্রয়োজনীয় গাড়ি। তবুও সেবা থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা। পানিতে মাত্রা অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি থাকায় ফায়ার সার্ভিসকে ভবন হস্তান্তর করতে পারছে না গণপূর্ত বিভাগ।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে চিলাহাটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ভবন নির্মাণে কার্যাদেশ দেয় নীলফামারী জেলা গণপূর্ত বিভাগ। গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাজা বিলকিস রাব্বী স্টেশনের মূল ভবন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ আর নিরাপদ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করে। কিন্তু স্থাপিত গভীর নলকূপের পানি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নীরিক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি ধরা পড়ে। যা জনস্বাস্থ্য আর পানিবাহী গাড়ীর রিজার্ভার ট্যাংকের জন্য ক্ষতিকর। ফলে ওই স্টেশনটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, চিলাহাটি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের বসবাস। এসব এলাকায় গত দুই বছরে অন্তত দেড়শ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে। আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুইজন মানুষ। পুড়ে মারা গেছে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি। ছাই হয়ে গেছে সঞ্চিত অর্থ, ধান, চাল, আসবাবপত্র।

ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুজিবুল ইসলাম জানান, উপজেলা শহর থেকে ভোগডাবুড়ী ও কেকতীবাড়ী  ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত এবং জোড়াবাড়ী ও গোমনাতি ইউনিয়নের দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের বেশি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো অগ্নিকাণ্ডে উপজেলা থেকে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি আসতে আসতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

৬ মাস আগে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সাইদুল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে আমার বাড়ির চারটি ঘর পুরে যায়। ডোমার থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে আসতে একটি ঘর রক্ষা পেয়েছিল। 

ডোমার উপজেলার গোমনাতি গ্রামের আরিফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পরও ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় গত ২৭ মাসে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুইজন মানুষ। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ধান, চাল, নগদ অর্থ ও আসবাবপত্র। চিলাহাটি ফায়ার স্টেশনের সেবা কার্যক্রম চালু থাকলে এ ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইড ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার আবু জুয়েল বলেন, ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে পানিতে সামান্য পরিমাণ আয়রন পাওয়া গেছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ভবনটি বুঝে নিচ্ছেন না।

নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম সরকার ঢাকা পোস্টকে জানান, চিলাহাটী ফায়ার স্টেশনের জন্য জনবল ও গাড়ি মজুদ আছে। ফায়ার স্টেশনে স্থাপিত গভীর নলকূপের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রা অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতির বিষয়টি সমাধানের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ বিষয়ে নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুজ্জামান সাথে কথা বলতে বার বার তার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার কার্যালয়ে গেলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। 

উল্লেখ্য, গত সাড়ে পাঁচ দশক পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন অফিস ও কাস্টমস হাউসের নির্মাণ কাজ চলছে। চিলাহাটি বাজারে রয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। সরকারি কলেজ, মার্চেন্টস স্কুলসহ নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে চিলাহাটিতে। ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে চিলাহাটি বেশ পরিচিত। সীমান্তে বিজিবির বিওপি ক্যাম্পসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা দিতে চিলাহাটিতে একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন থাকা জরুরি। 

মাহমুদ আল হাসান রাফিন/আরএআর