নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি স্কুলে পাঠদান বন্ধ রেখে কোমলমতি শিশুদের ছাতা উপহার দিয়ে তাদের মা-বাবার ভোট চাইলেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। সোমবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলার ২৯ নম্বর লক্ষ্মীবরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ান তার সমর্থকদের নিয়ে সোমবার তার ছবি সম্বলিত ছাতা নিয়ে ২৯ নম্বর লক্ষ্মীবরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। এ সময় শিশুরা নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যস্ত ছিল। 

পরে ইউসুফ দেওয়ানের নির্দেশে শিক্ষকরা শিশুদের পাঠদান বন্ধ করে বিদ্যালয়ের মাঠে একত্রিত করেন। শিশুরা একত্রিত হওয়ার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার সমর্থকরা শিশুদের সামনে চেয়ারম্যানের পাঁচ বছরের উন্নয়নের চিত্রের বিবরণ তুলে ধরে বক্তব্য দিয়ে শিশুদের মাধ্যমে তাদের মা-বাবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে ইউসুফ দেওয়ানের ছবি সম্বলিত ছাতা উপহার দেওয়া হয়। এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টা পাঠদান বন্ধ থাকে।

লক্ষ্মীবরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল হক জানান, চেয়ারম্যান সাহেব হঠাৎ করে বিদ্যালয়ে ছাতা উপহার নিয়ে উপস্থিত হয়ে শিশুদের সামনে বক্তব্য দেন। এ সময় পাঠদান অল্প সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শিশুদের মধ্যে যে ছাতা উপহার দিয়েছেন ওই ছাতা সরকারি অর্থে কেনা ছিল (লোকাল গর্ভন্যান্স সার্পোট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের অধীনে গত ছয় মাস আগে ওই ইউনিয়নে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সেই অর্থ দিয়ে ছাতাগুলো কেনা হয়েছে)।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের এলজিএসপি-৩ প্রজেক্টের উপ-পরিচালক ফাতেমা তুল জান্নাত জানান, সরকারি অর্থে নির্বাচনকালীন এভাবে ছাতা উপহার দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের ছাতা উপহার দিয়ে তাদের মা-বাবার কাছে ভোট প্রার্থনা করার ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে সোমবার চিঠি দিয়েছেন রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জেসমীন আক্তার। তিন কার্য দিবসের মধ্যে চিঠির ব্যাখ্যার জবাব দেওয়ার সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ান জানান, আমি শিশুদের ভালোবেসে ছাতাগুলো উপহার দিয়েছি। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়নি।

রির্টানিং কর্মকর্তা জেসমীন আক্তার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ দেওয়ান নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এমন অভিযোগ পেয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ-ফরিদ/এসপি