সৌদিয়া পরিবহনের চলন্ত একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীর সামনে পর্নো ভিডিও দেখার অপরাধে এক যুবককে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। 

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ড দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার স্বজনশ্রী গ্রামের মো. আব্দুর রউফের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান (২৬)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।

পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তিনি সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া পরিবহনের (চট্ট মেট্রো ব-১১-১০৮৬) একটি বাসে সিলেটে আসছিলেন। বাসটির বি-৪ সিটে বসা ছিলেন মাহবুবুর রহমান। তার পেছনের সিটে বসা ছিলেন ওই ছাত্রী। মাহবুবুর এক পর্যায়ে তার সিটের স্প্রিং সুইচ টেনে পেছনে হেলিয়ে দেন। পরে মোবাইল ফোনে পর্নো ভিডিও প্লে করে ওই ছাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ দেখান এবং ছাত্রীর দিকে বারবার তাকিয়ে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করেন। তরুণী প্রতিবাদ করলে বাগবিতণ্ডার পরে সিট বদলে অন্য নারীর পাশের আসনে বসানো হয়।

এদিকে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৭টায় মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছামাত্র মাহবুবুর রহমান গাড়ি থেকে নামতে চাইলে ওই ছাত্রী বাধা দেন। তিনি যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাকে গাড়িতে রাখার জন্য অন্যান্য যাত্রীদের সহায়তা চান। এ সময় গাড়ির ভেতরে যাত্রীদের হট্টগোল শুরু হয়। তাদের হট্টগোল শুনে মহাসড়কে রাতে দায়িত্বরত শেরপুর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মো. শিবলু মিয়া সেখানে যান। তিনি বাসের যাত্রী ও হয়রানির শিকার ছাত্রীর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি শোনেন।

পরে তিনি বিষয়টি শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেনকে জানান। ওসি সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদ উল্লাহকে বিষয়টি জানান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেন ওসি।

শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি নবীর হোসেন বলেন, হাইওয়ে পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বিস্তারিত শোনেন এবং ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যুবককে কারাদণ্ড দেন এবং জরিমানা করেন।

হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রীর কারণে ওই বখাটে যুবককে আটক করে সাজা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দণ্ড ঘোষণার পর অভিযুক্তকে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরেজমিনে এসে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২/৮এর (৪) ধারা মোতাবেক ৩ (তিন) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড, অনাদায়ে বিনাশ্রমে ১ (এক) মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরআই