কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) অপহরণ করে দলবেঁধে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। রোববার (২১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ওই ছাত্রীর বাবা। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার একমাত্র মেয়েকে অপহরণ করে দলবেঁধে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৪ জুলাই গভীর রাতে আমার নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে অপহরণ করা হয়। পরের দিন উপজেলার ভাঙ্গা বটতলা এলাকায় একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একাধিক জনের নাম উল্লেখসহ মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি। পরে পুলিশের লেখা একটি এজাহারে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। 

তিনি আরও বলেন, পুলিশের দেওয়া ওই এজাহারে মূল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। আমার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ওই মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে মিরপুর পৌর এলাকার কুরিপোল মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিলন হোসেনের ছেলে আপনকে গ্রেফতার করে ঘটনার মোটিভ উদ্ধার করেছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম। এ সময় আমি পুলিশকে বলেছিলাম, এত বড় ঘটনা আপনের একার পক্ষে ঘটানো অসম্ভব। অথচ আমার আর্তনাদ হাহাকারকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। 

এদিকে গত ৯ নভেম্বর আদালতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ছাত্রী (১৪) দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ কারণেই তার গোপনাঙ্গের ভেতরে ও বাইরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া রশি দিয়ে পেঁচানোর কারণে তার গলার মাঝ বরাবর গোলাকার দাগ রয়েছে। বাম চোখের নিচেও আঘাতের কারণে রক্ত জমাট বাধা ছিল। পেটে দুটি, গলায় পাঁচটি ও পেছন দিকে মাজার ওপর মেরুদণ্ড বরাবর তিনটি ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণে তার শ্বাসনালি ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ছাত্রীর ঘাড়ের পেছন দিকে ছয়টি ও ডান পায়ের পাতার ওপর ছয়টি স্থানে পোড়ার ক্ষত রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় জ্বলন্ত সিগারেট জাতীয় কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছিল। ঘাড়ের নিচ থেকে দুই পা পর্যন্ত ফুটন্ত তরল পদার্থ ঢেলে পোড়ানো হয়েছে।

মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের মেডিকেল অফিসার সুতপা রায়, মেডিকেল অফিসার রুমন রহমান ও কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কোনো এক কারণে তার মেয়ে হত্যার মূল ঘটনাকে পুলিশ আড়াল করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণের পর আমার মেয়েকে হত্যা করার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও, এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ মামলায় একজন আসামিকে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মামলার তদন্তের ভার সিআইডি অথবা পিবিআইকে দেওয়ারও দাবি জানান।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখন বেশি কিছু বলতে পারব না।

এ বিষয়ে মিরপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আজমল হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা মামলাটি নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছি। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। যেহেতু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এসেছে, সেহেতু ডিএনএ পরীক্ষায় একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়ে আরও পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে।

রাজু আহমেদ/এসপি