চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শিক্ষা কর্মকর্তার কক্ষে হামলার অভিযোগ
যশোর সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা ও মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের আয়শা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন অভিযোগ শোনা গেলেও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। মারপিট, হট্টগোল, ভয়ভীতির মাধ্যমে এই নির্বাচনে সভাপতি হয়েছেন রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাজাহারুল ইসলাম। তিনি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইছালীর আয়শা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় গত ২১ অক্টোবর। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী অভিভাবক সাধারণ শ্রেণিতে চারজন, মহিলা সংরক্ষিত সাধারণ শ্রেণিতে একজন, শিক্ষক প্রতিনিধি সাধারণ শ্রেণিতে দু’জন এবং সংরক্ষিত মহিলা শ্রেণিতে একজন মোট ৮ জন মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। ৩১ অক্টোবর মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিনে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় এবং অতিরিক্ত কেউ মনোনয়ন না নেওয়ায় ৮ জনেরই সবাই মনোনীত হন।
বিজ্ঞাপন
তারা হলেন অভিভাবক সাধারণ শ্রেণিতে জগমোহনপুর গ্রামের ফারুক হোসেন ও মশিউল আজম, হাশিমপুর গ্রামের নওশের আলী মন্ডল, হুদারাজাপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা শ্রেণিতে রাজাপুর গ্রামের সেলিনা খাতুন, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে ওই বিদ্যালয়ের এনামুল কবীর ও আলমগীর হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে সুরাইয়া পারভীন।
নিয়মানুযায়ী এই ৮ জন ভোট দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করবেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বতর্মান আহ্বায়ক কমিটির প্রধান মাজাহারুল ইসলাম এবং সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ।
রোববার সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কক্ষে সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ার দিন ছিল। সেখানেই আগেই হাজির হন দুইজন প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা। দুপুরে সেখানে উপস্থিত হন যশোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীসহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। মৌখিকভাবে ভোট চাইতে গেলে সেখানে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদের সমর্থকসহ ৮-১০ মারপিটের শিকার হন। হামলার মুখে তিনজন প্রতিনিধি পালিয়ে যান। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ৮ জনের মধ্যে ৫ জনকে নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়।
এ বিষয়ে আয়শা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচনের দিন তিনিসহ অন্যান্য শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ভোট দিয়ে মাজাহারুল ইসলামকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। সেখানে হট্টগোলের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এম কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেছেন, নির্বাচনের সময় হাত তোলা বা সমর্থন নিয়ে বাইরের কিছু লোক হঠাৎ করে হট্টগোল শুরু করে। তার কক্ষে তর্কাতর্কি, ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। তার কক্ষের বাইরে কী ঘটেছে, তা তিনি জানেন না। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ৫ জনকে নিয়ে নির্বাচন সম্পন্নের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তবে তাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জাহিদ হাসান/এনএ