সন্তানকে নিয়ে শুধুই কাঁদছেন মা আমেনা। কী করবেন, কার কাছে যাবেন, কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে সোমবার অসুস্থ সন্তানসহ হাজির হয়েছিলেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সব বলেছেন তিনি। একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এই মা।

গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) শাকিল ও আমেনা দম্পতির ঘরে স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নেয় তাদের সন্তান। জন্মের পরে দেখা যায় শিশুটির দুটি পা বাঁকা এবং প্রসাব পায়খানার রাস্তা নেই।

পরদিন শনিবার (২০ নভেম্বর) শিশুটিকে নিয়ে তার মা ও নানা আবু তালেব ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে দেখার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।  

ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল স্ত্রী আমেনা বেগম আগেও দুইবার গর্ভবতী হয়েছিলেন। তবে বাচ্চা পেটে থাকতে পরিণত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এবারের সন্তান ছিল তাদের বহুল কাঙ্খিত। কিন্তু সন্তান জন্ম নেয়ার পরে চরম হতাশার মধ্যে পড়ে গেছে পরিবারটি।

সোমবার (২২ নভেম্বর)  দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন পরিবারের সদস্যরা। অর্থাভাবে শিশুটিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিতে পারছেন না তারা। কোনোভাবে টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে দেশবাসীর কাছে শিশুটিকে বাঁচানোর আকুতি জানান মা আমেনা বেগম।

ফরিদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, শিশুটি অনেকগুলো সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে হবে। এ ধরনের চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে হয়ে থাকে। শিশুটির বেশ কয়েকটি অস্ত্রপচার করতে হবে। এই চিকিৎসা বেশ ব্যয় বহুল।

শিশুটির নানা আবু তালেব বলেন, তার জামাই রিকশাচালায়। এ দিয়ে যা আয় হয় তাতে কোনো রকম সংসার চলে। আমিও (নানা)  দরিদ্র মানুষ। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াই চলে না। এই শিশুর চিকিৎসা করাব কীভাবে?

শিশুটির মা বলেন, আমার বাচ্চাটার চিকিৎসা যাতে করাতে পারি সেই ব্যবস্থাটা আপানারা দশজনে করে দেন। আমার আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। 

বিষয়টি জেনে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে আরো সহায়তা দেবে জেলা প্রশাসন।

জহির হোসেন/এমএএস