বালাইনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমন করতে পারছেন না কপিচাষিরা। মেহেরপুরের সর্বত্র কপিখেতে সরু পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। পোকা দমনে কৃষি অফিসের কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন না বলে কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

গাংনীর কপিচাষি খায়বার আলী। তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হবে বলে আশাও করেছেন তিনি। কিন্তু সরু পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। পোকাগুলো এসে ফুল ও পাতা ফুটো করে গর্ত করছে। ছিদ্র হওয়ায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

তিনি জানান, পোকা দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করছেন, কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না আক্রমণ। এক বিঘা জমিতে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার শুধু কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে অন্তত দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হবে।

বাঁধাকপি চাষি খয়বার আলী জানান, তিনি অন্য বছরের ন্যয় কীটনাশক ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। শুধু খয়বার হোসেন নয় তার মতো অনেক কপি চাষি এ ধরনের পোকার আক্রমণে দিশেহারা।

গেল বছর আগাম জাতীয় কপির চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এবারও লাভের আশায় বেশি করে কপির চাষ করেছেন। অথচ সরু পোকার আক্রমণে সব আশা ধুলোয় মিশে গেছে বলে জানান কুষক কালু মিয়া।

পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তৈয়ব আলী বলেন, কপির জমির পাশে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে এই উড়ন্ত পোকার আক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু অনেক কিছু প্রয়োগ করেও সুফল পাইনি, পরে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়েও কাজ হচ্ছে না। এ বছর পোকার আক্রমণের ফলে আমাদের উৎপাদিত কপি বাজারে চাহিদা কম।

কৃষি অফিসের হিসাবমতে, জেলায় এবার ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করা হয়েছে। যা গেল বছরের তুলনায় দেড় গুণ। জেলার ভাটপাড়া, সাহারবাটি, কালিগাংনী হিজলবাড়িয়া, কুতুবপুর, শোলমারি ও গাংনী উপজেলার কাথুলী, ধলা, নওয়াপাড়া, জোড়পুকুর, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঠে চাষিরা লাভের আশায় কপির চাষ করে।

এসব খেতের আশির ভাগই সরু পোকার আক্রমণের শিকার। পোকার আক্রমণের কারণে অধিকাংশ কপিখেতে পাতা ফুটো ও হলুদ আকার ধারণ করেছে। একপর্যায়ে শিকড় পচে গাছ মরে যাচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকেরা বিভিন্ন কোম্পানির বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো ধরনের সুফল পাচ্ছেন না।

কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বালাইনাশক ব্যবহারের পরও তেমন কাজ না হওয়ায় কীটনাশক কোম্পানি ও বালাইনাশক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে। চাষিদের সে অনুযায়ী কাজ করতে বলা হবে। চাষিরা এতে ফল পাবেন বলেও আশাবাদী।

এমএসআর