সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার আসামি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার নাম সীমান্ত কুমার বর্মণ। তিনি ঢোলারহাট ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

গত শনিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সীমান্তের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। পরে গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জুন মাসে সাধারণ সহায়তা (জিআর) প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলার মসজিদের ওয়াজ মাহফিল, মন্দিরের নামযজ্ঞ ও মাদরাসার এতিমখানায় খাবারের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২১৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের ৩৪টি প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৪ টন চাল। ঢোলারহাট ইউপির চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জাল কাগজপত্র তৈরি করে বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।

পরে ২০১৯ সালের মার্চে এ ঘটনার অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক। সে সময় সীমান্ত কুমার বর্মণ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢোলারহাট এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৮ টাকা জমা দেন।

একই বছরের ১৩ নভেম্বর ছয় টন সরকারি প্রকল্পের চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে সীমান্ত এবং উপজেলা খাদ্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ।

গ্রেফতারের পর ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. হাছানুজ্জামান এই ছয়জনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। ৪৭ দিন কারাগারে আটক থাকার পর সীমান্ত উচ্চ আদালতে জামিন পান। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।

আসামি সীমান্ত কুমার বর্মণকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। ঝলঝলিপুকুর এলাকার শরৎ চন্দ্র বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় জলসা, নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের সরকারি বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করেন, তাকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি।’

ঢোলারহাট এলাকার কেরামত আলী বলেন, ‌‘এলাকায় অনেক যোগ্য প্রার্থী ছিল। তিনি চাল আত্মসাৎ মামলার আসামি, তাকে কীভাবে আবার মনোনয়ন দেওয়া হলো, আমি বুঝতে পারছি না। তার মনোনয়নের পেছনে অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে।’

সীমান্ত কুমার বর্মণ বলেন, ‘যেকোনো সরকারি প্রকল্পের চাল প্রকল্প সভাপতির নামে বরাদ্দ হয়। সভাপতিই চাল উত্তোলন করেন। সেসব বরাদ্দ উত্তোলনে আমার সম্পৃক্ততা দেখিয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। আমি ওই চাল আত্মসাতে জড়িত ছিলাম না।’

রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে তালিকায় সীমান্ত কুমার বর্মণের নাম পাঠানো হয়েছিল। মামলায় তিনি এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানো চিঠিতে সীমান্তের নামে যে চাল আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা রয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়। চতুর্থ ধাপে ২৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাটসহ ২০টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে।

এমএসআর