বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তিন কাউন্সিলর নগরীর তিনটি থানায় এই অভিযোগ করেন।

এর মধ্যে রাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন বোয়ালিয়া মডেল থানায়, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন চন্দ্রিমা থানায় এবং ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন রাজপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

এদের মধ্যে কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে। তৌহিদুল হক সুমন নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে পদ হারান তিনি। এছাড়া আনোয়ার হোসেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

লিখিত তিনটি অভিযোগ প্রায় অভিন্ন। ২২ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত সংবাদে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন ও আনোয়ার হোসেন নিজ নিজ কার্যালয়ে বসে এই সংবাদ দেখেন। আর তৌহিদুল হক সুমন এই সংবাদ দেখেন শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে।

তারা উল্লেখ করেন, সংবাদে একটি অডিও ক্লিপ প্রচারিত হয়। এতে কাটাখালী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনকে পাপ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, বড় হুজুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজশাহী সিটি গেটে জীবন দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসাতে দেবে না। ম্যুরালটা দিলে ঠিক হবে না। আমার পাপ হবে। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক এটা সঠিক না। বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করবো নাকি?

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা প্রচার করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে উস্কানি প্রদান করেছেন। 

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতেই এই কার্মকাণ্ড। মেয়রের এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বাদীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ফলে আইনি প্রতিকার চেয়েছেন এই তিন কাউন্সিলর।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বিষয়টি নিয়ে দিনভর মুখ না খুললেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে বিবৃত্তি দেন কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী। তাতে ভাইরাল হওয়া অডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অডিওটি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। 

আপনারা বুঝতে পারবেন অডিওটি এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে না কিংবা কেউ ম্যুরাল নির্মাণ করলে বাধা দেওয়া হবে এরকম কথা কারও সামনে কখনো বলিনি।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করি এবং মমতাময়ী জননী বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দেখানো পথে একজন সাধারণ কর্মী হয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘গত ২৯ মে আমার ফেসবুক আইডি থেকে কাটাখালি পৌরসভার প্রবেশদ্বারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে মর্মে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। 

গেট নির্মাণের জন্য সকল প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু ঢাকারা-রাজশাহী মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান থাকায় গেটটি নির্মাণ সাময়িকভাবে বন্ধ আছে।

চার লেন রাস্তা নির্মাণের জন্য মহাসড়কের দুই পাশে কতটুকু জায়গা বাড়ছে সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরে আশা করছি আগামী বছরের জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় গেট নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করতে পারব।

তিনি দাবি করেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকে একটি অশুভ শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ যেন গেট নির্মাণ করতে না পারি এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে।’

মেয়র আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি