বছরে তিন লাখ টাকার উপরে আয় করা মানুষের সংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যার তুলনায় করদাতা না বাড়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তিনি বলেছেন, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত চার কোটি করদাতা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশে করদাতা মাত্র ২৯ লাখ। এই পরিসংখ্যান বর্তমানে আমাদের জন্য সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যারা স্বাবলম্বী এবং বছরে তিন লাখ টাকার ঊর্ধ্বে আয় করছেন, তাদের ওপরই কর প্রযোজ্য। কিন্তু তিন লাখের ওপর আয় করা বেশির ভাগ মানুষই করদাতা তালিকার বাহিরে। করদাতা বাড়লে রাজস্ব আদায় বাড়বে, সঙ্গে উন্নয়নও তরান্বিত হবে।

বুধবার (২৪ নভ্ম্বের) দুপুরে রংপুর নগরের আরডিআরএস ভবনের বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে সেরা করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ‘করের টাকায় গড়লে দেশ- রইবে না আর ঋণের রেশ’ প্রতিপাদ্যে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘমেয়াদী করদাতাদের সম্মানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কর অঞ্চল-রংপুর।

তিনি রংপুর অঞ্চলে উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণ ও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, রংপুর কর অঞ্চলে করদাতার সংখ্যা অন্য এলাকার চেয়ে ভালো এবং সন্তোষজনক। আমাদের অঞ্চলের মানুষেরা কর প্রদানে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই নিরিখে আমাদের উন্নয়ন হয়নি। বাজেট প্রণয়নে রংপুর বিভাগ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। অন্যান্য বিভাগের চেয়ে আমাদের জন্য বরাদ্দ অনেক কম। এই বৈষম্যের কারণে উন্নয়নেও আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। এ সময় তিনি কর আদায় বাড়ানোর স্বার্থে আইন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল আলীম মাহমুদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, রংপুর কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী, রংপুর কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মঞ্জুরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন রংপুর অঞ্চলের কর কমিশনার আবু হান্নান মো. দেলোয়ার হোসেন।

বক্তারা আরও বলেন, কর প্রদানে উৎসাহিত করা গেলে উন্নয়ন আরও তরান্বিত হবে। সরকার রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। সারাদেশে মেলার আদলে আয়কর রিটার্ন গ্রহণের সঙ্গে নতুন করদাতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা উন্নয়ন, কিন্তু কর দেবার বেলা অনীহা কাজ করে। ভীতি দূর করে নিজে কর দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও উৎসাহিত করতে হবে। কারণ আগামীতে আয়কর-ই হবে দেশের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত।

অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা জেলা ছাড়া রংপুর কর অঞ্চলের আওতাধীন রংপুর মহানগরসহ বিভাগের সাত জেলা থেকে চার ক্যাটাগরিতে ৫৬ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়। এ অঞ্চলের প্রত্যেক জেলা থেকে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে তিনজন, দীর্ঘমেয়াদিতে দুইজন, মহিলা করদাতা একজন ও তরুণ একজন করে সাত জেলা থেকে মোট ৪৯ জন এবং সিটি ক রেশন থেকে সাতজনসহ মোট ৫৬ জনকে সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

এ বছর ২০২০-২০২১ করবর্ষে রংপুর সিটি করপোরেশ এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন তৌহিদ হোসেন আশরাফী, মনজুর আহমেদ, রফিকুল ইসলাম। দীর্ঘমেয়াদী করদাতা হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন, আলমগীর হোসেন, সর্বোচ্চ করদাতা নারী হিসেবে সাবা পারভীন এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে রোজাফ কবির সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন। এ ছাড়া রংপুর জেলা থেকে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদার রহমান, মোস্তফা আল মাহমুদ, দীর্ঘমেয়াদী করদাতা বিপ্লব কুন্ডু, নৃপেন্দ্র নাথ সরকার, নারী সর্বোচ্চ করদাতা শুভিনা ইয়াসমিন ও তরুণ পুরুষ করদাতা প্রবীর কুমার গোস্বামীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে রংপুর কর অঞ্চলের আওতাধীন পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের সেরা করদাতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সুধিজন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা ‍উপস্থিত ছিলেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই