লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের আশ্বাস দিয়ে প্রার্থী পান্না আক্তারের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন মিয়াজির বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নগর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন। 

মমতাজ উদ্দিন মিয়াজি উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তিনি ৭৫ হাজার টাকা ফেরতও দিয়েছেন বলে বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন অভিযোগকারী প্রার্থী পান্না আক্তার। 

জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে গত ১১ নভেম্বর কমলনগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে চরলরেন্স ইউনিয়নে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হয়। ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নগর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন মিয়াজি। এ ওয়ার্ডে বিনা ভোটে সদস্য প্রার্থী নির্বাচন হয়। এখানে শুধু নারী সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগকারী পান্না আক্তার সূর্যমুখী প্রতীকে ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী  ছিলেন।

পান্না আক্তার বলেন, জনগণ আমাকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমার ভোট চুরি করেছেন। এ কেন্দ্রে আমার শুধু ৮টি ভোট দেখানো হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের আশ্বাসে ওই কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে ভোটের আগের রাতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ৬ দিন আগে এক প্রভাবশালীর মধ্যস্থতায় তিনি ৭৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

নির্বাচনের ১৩ দিন পরে এ অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পান্না বলেন, ভোটের ফলাফল শুনে আমি বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমি এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা চিন্তা করিনি। আমার স্বামী শাহ আলম আমাকে মামলা করতে বলেছিলেন। তিনি লোকমুখে শোনেন আমি ভোট বেশি পেয়েছি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা টাকা নিয়ে আমার ভোট অন্য প্রার্থীর ব্যালটের সঙ্গে গণনা করেছেন। ওই কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
 
অপর প্রার্থী মনি বেগম (হেলিকপ্টার প্রতীক) বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এজেন্টদের বের করে দিয়ে আমার প্রাপ্ত ভোট মাইক প্রতীকের প্রার্থীর ব্যালটের সঙ্গে যুক্ত করে তাকে জিতিয়ে দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে আমার ৮টি ভোট দেখানো হয়েছে। আমি ওই কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানাই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সন্ধ্যায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন মিয়াজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টিও সাজানো। আমি কোনো টাকা নিইনি, ফেরত দেব কীভাবে? আমার কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এতোদিন পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জায়েদুল হোসেন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর