বগুড়া-৩ (আদমদিঘী-দুপচাঁচিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ে খুশি হয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

মিষ্টি বিতরণ করেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, দফতর সম্পাদক আল রাজী জুয়েল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম সাজাহান, উপদফতর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজা, সদস্য গৌতম কুমার দাস, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শিবলু শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদ আল হাসান জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ আলম পারভেজ, গণশিক্ষা সম্পাদক সজীব সাহা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

জানা গেছে, পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই এ রায় ঘোষণা করে ট্রাইবুনাল।

মোমিনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ ছিল। একটি অভিযোগ ছিল ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখের গণহত্যার। সেদিন বগুড়ার সান্তাহারে প্রথম হানাদার বাহিনী আসে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করে ১০ জনকে হত্যা করে। এ ছাড়া সেদিনই চারজন প্রো-সিভিলিয়ানকে হত্যা করা হয়। এটাকে আদালত গণহত্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন এবং রায় দিয়েছেন। এই গণহত্যায় মোমিন তালুকদার হানাদারদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, আদমদিঘী থানার কাশিমালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে দুজনকে হত্যা। তিনজনকে ধরে আদমদিঘী রেলস্টেশনে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা। সেটিও ট্রাইব্যুনাল সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেন। তার দায়েও সাজা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ ছিল চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার।

১৯৭১ সালে মোমিন তালুকদার ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মী। কিন্তু পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করতে তিনি সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। আদমদিঘী থানার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরে আদমদিঘী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন।

মোমিন তালুকদার বর্তমানে বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। মোমিন ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধীর ঠাঁই হবে না। এই রায়ে বগুড়াবাসী অত্যন্ত খুশি। বর্তমান প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়।

এনএ/জেএস