নেই নিজস্ব ভিটেমাটি। আয়-রোজগারও সামান্য। দিনমজুরের কাজ করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। তাই নুন আনতে পান্তা ফোরানো অবস্থা। রোদ-বৃষ্টি আর ঝড়ঝঞ্ঝার সঙ্গে ২৫ বছর লড়াই করে অন্যের বাঁশ-বাগানে ঝুপড়িতে বসত করছেন সুশান্ত হালদার দম্পতি। অবশেষে তাদের কপালে জুটেছে বসবাসের একটি ঘর।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে গাংনীর ভাটপাড়া আবাসন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তাদের হস্তান্তর দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম। সেই ঘরে রয়েছে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, পানির জন্য টিউবওয়েল ও গোসলখানা। ঘরসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেবেন বলেও আশ্বস্ত করেন ভিটেহীন সুশান্ত পরিবারকে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এক নিভৃতপল্লির নাম হাড়িয়াদহ। এ গ্রামে মা-বাবার সঙ্গে অন্যের জায়গায় বসবাস করেছেন ২৫ বছর ধরে। একদিন সেখান থেকে উচ্ছেদ হতে হয়। পরে গ্রামের বানাত মণ্ডলের বাঁশ-বাগানে আশ্রয় হয়। এখানে একটি ঝুপড়িতে স্ত্রী পূর্ণিমা হালদারকে নিয়ে বসবাস ২৫ বছর ধরে। পরিবারে তাদের দুই সন্তান বিজয় ও জয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশ, পাটকাঠির বেড়াঘেরা একটি ঘর। তার ওপরে রয়েছে পলিথিনের ছাউনি। রোদ-বৃষ্টি ঝড় সহ্য করে গাদাগাদি করে তাদের বসত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করায় রোগব্যাধি তাদের নিত্য সঙ্গী। দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোটানো যেখানে তাদের দায়। সেখানে রোগশোকের জন্য ভালো চিকিৎসা করানো তো স্বপ্নের ব্যাপার। তাই তাদের শেষ ভরসা হয় ওঝা বা বৈদ্য।

সুশান্ত হালদার জানান, পৈতৃক কোনো ভিটেমাটি না থাকায় বিয়ের পর থেকে ওই গ্রামের জহুরুল হকের বাঁশ-বাগানে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সংসার পাতেন তিনি। ২৫ বছর স্ত্রী পূর্ণিমাকে নিয়েই সেখানে ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে বিজয় আর ছোট ছেলে জয় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সম্প্রতি সেখানে থাকা সম্ভব না হওয়ায় গ্রামের বানাত আলীর বাঁশ-বাগানে চলে এসেছেন।

পূর্ণিমা হালদার বলেন, বিয়ের পর থেকেই অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের জীবন। জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় এলে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর তাদের দেখা মেলে না। বিভিন্ন সময়ে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে অনেক লোকজন আসে, আমাদের দুরবস্থা দেখে ছবি তোলে। আবার কেউ কেউ কিছু সহযোগিতা করে ছবি তোলে। কিন্তু কেউ স্থায়ীভাবে বসতের ব্যবস্থা করেনি। এ কারণে আমার বড় ছেলে বিজয় থাকে অন্যের বাড়িতে।

ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুশান্ত হালদার ও পূর্ণিমা হালদার। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এবার একটু নিরাপদে থাকতে পারবেন, এ জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।

হালদার দম্পতিদের ব্যাপারে প্রতিবেশীরাও বেশ মর্মাহত। তারাও অনেকের কাছে এই দম্পতির ঘরের জন্য অনুরোধ করেছেন কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্ব দেননি। তার বলছেন, অবশেষে ৫০ বছরের দুখ ঘুচল সুশান্ত পরিবারের।

রাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জসিম উদ্দীন জানান, বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় সরকারে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানার পর আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করি। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানালে তিনি ঘর বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সে অনুযায়ী হালদার দম্পতির জন্য ভাটপাড়া আবাসন প্রকল্পে ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে তাদের ঘর বুঝিয়ে দিয়েছি।

সুশান্ত হালদার পরিবারকে ঘর দিতে সার্বিক সহযোগিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন।

এম এ খালেক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে হাজার হাজার ভূমিহীন পরিবারকে জমিও ঘর দিয়েছেন। সুশান্ত হালদারও ৫০ বছর পর হলেও একটি বাসস্থান পেলেন। তিনি বলেন, শুধু বাসস্থানই নয়, ওই পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এনএ