রাজশাহীর সিটি গেট এবং কাটাখালী পৌরসভার প্রবেশ গেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বানাবেন সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরের দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এই সংসদ সদস্য।

জাতির জনকের ম্যুরাল নিয়ে কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলীর বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন আয়েন উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে আয়েন উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি আমাদের স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।

কিন্তু কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলী কাটাখালীতে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপন করতে দেবেন না। নিশ্চিহ্ন করবেন, জীবন দিয়ে হলেও বাধা দেবেন। এমন মন্তব্য করে তিনি বাঙালি জাতির হৃদপিণ্ডে আঘাত করেছেন।

মেয়র আব্বাসকে কুলাঙ্গার আখ্যা দিয়ে আয়েন উদ্দিন বলেন, আমি শুধু সাংগঠনিকভাবে তার শাস্তি দাবি করি না, রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের মাধ্যমে তার শাস্তি দাবি করি। কারণ এ রকম কুলাঙ্গাররা বাঙালি জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বার বার কটুক্তি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আয়েন উদ্দিন জানান, এই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে কণ্ঠটি মেয়র আব্বাস আলীর। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। তারাও কাল (শুক্রবার) সভা করে ব্যবস্থা নেবেন।

টানা দুই মেয়াদে রাজশাহী-৩ আসনে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। এই সময়টাই উত্থান মেয়র আব্বাস আলীর। অভিযোগ রয়েছে, এমপি আয়েনের ইন্ধনেই বেপরোয়া মেয়র আব্বাস। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে সাংবাদ সম্মেলনেও।

জবাবে আয়েন উদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালে তিনি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় মেয়র আব্বাস নগর যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছে। সেখানে এমপি হিসেবে তার ভূমিকা নেই। কিন্তু প্রতীক পাওয়ার পর ব্যক্তি নয়, নৌকাকে জেতাতে নিজের অবস্থান থেকে কাজ করেছেন। দলের পক্ষে মানুষ এসেছেন, প্রতীক দেখে ভোট দিয়েছেন। আব্বাস মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র আব্বাস আলীর পরিবারের বিএনপি ঘনিষ্টতার প্রশ্নে মেয়র আয়েন উদ্দিন বলেন, এটা সত্য যে, মেয়র আব্বাসের ভাই যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত এবং শিক্ষক হত্যা মামলার আসামি। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না।

খন্দকার মোস্তাকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, খন্দকার মোস্তাকও আওয়ামী লীগ করতেন। কিন্তু তার মধ্যে যে এত বড় নিষ্ঠুরতা ছিল, সেটি আমরা বুঝতেই পারিনি। তা না হলে আমরা জাতির পিতাকে হারাতাম না। খন্দকার মোস্তাকের অনুসারীরা দলের জন্য, জাতির জন্য হুমকি ।

গত সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথা বলতে শোনা গেছে মেয়র আব্বাসকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের শেষের দিকের আলোচনার কিছু অংশের রেকর্ড এটি। গত আগস্টের মাঝামাঝিতে নিজ দফতরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই বৈঠক করেন মেয়র। এই ক্লিপটি নিয়ে রাজশাহীতে বইছে সমালোচনার ঝড়।

এই ঘটনায় মেয়র আব্বাসকে দলীয় পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আব্বাস আলীর নামে নগরীর বোয়ালিয়া, চন্দ্রিমা ও রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি অভিযোগ দাখিল করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলর।

মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই