মাত্র ১৩০ টাকা করে খরচে মুন্সিগঞ্জের ৩০ জন তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কোনো রকম ঘুষ বা তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়েছে তাদের। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। গতকাল বুধবার রাত ১০টায় মুন্সিগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণা হয়।

মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, এবার এ জেলার ৬টি উপজেলা থেকে কনস্টেবল পদে ১৪৩ জন তরুণী ও এক হাজার জন তরুণ আবেদন করে। এদের মধ্য থেকে শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষায় ২৮৫ জন উত্তীর্ণ হয়। সেখান থেকে ১১০ জন মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত আসে। 

বুধবার দিনভর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫ জন তরুণী ও ২৫ জন তরুণ পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়। গত ১৪ নভেম্বর থেকে গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত করা হয়।

মাত্র ১৩০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা এসব তরুণ-তরুণী। আনন্দে কেঁদে ফেলেন অনেকেই।

তাদেরই একজন শাহাদাৎ হোসেন। শাহাদাৎ জানান, দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তার বাবা মারা যায়। সংসারে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই ও চারজন বোন রয়েছে। বড় বোনের সহযোগিতায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। এরপর থেকে মানুষের দোকানে, কৃষি জমিতে কাজ করে নিজের খরচ ও পড়াশোনা করেছি। 

বর্তমানে শ্রীনগর সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। জানতে পারি পুলিশে চাকরি পেতে টাকা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়াই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হলাম। জীবনের কষ্ট মনে হয় শেষ হচ্ছে।

টঙ্গিবাড়ির আমেনা আক্তার বলেন, তার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে পুলিশ হবে। কয়েক মাস আগে তার বাবা মারা যায়। ঘুষ ছাড়া, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।

সমরিতা ইসলাম বলেন, যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম তখনই পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। ভাবতাম চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হবে। ঘুষ ছাড়া নিজের সক্ষমতা দিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছি। আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপি শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে সবাই যোগ্যতা সম্পন্ন। পুলিশের চাকরি পাওয়ার সকল যোগ্যতা তাদের আছে। যাচাই-বাছায়ের পর শারীরিক সক্ষমতা অর্জন, লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষায় তারা ভালো করেছে।

ব.ম শামীম/এমএএ