‌‘আমরা চর এলাকায় বহু বছর থেকে বসত করে আসছি কোনোদিন বিদ্যুৎ পাইনি। ভাবছিলাম এ জীবনে বিদ্যুৎ আসবে না। সরকার চরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, আমরা কল্পনায় করতে পারছি না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের জুঁই বেগম।

জুঁই বেগম আরও জানান, বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা স্বার্থক হয়েছি। আমাদের চরের প্রতিটা বাড়িতে এখন বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। ডিসের লাইনে টেলিভিশন দেখতে পারছি। বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে নদী ভাঙন। নদী ভাঙন রোধ করা গেলে সরকারের কাছে আমাদের আর কোনোপ্রকার চাওয়াপাওয়া নাই।

ওই গ্রামের শরিফা বেগম জানান, আমরা চর এলাকায় ছোট থেকে বড় হয়েছি কখনো স্বপ্নে ভাবী নাই বিদ্যুৎ পাব। শেষ বয়সে এসে বিদ্যুৎ পেলাম। ১৫ দিন থেকে বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। ভালোই লাগছে। কিন্তু কতদিন এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারব আল্লাই জানে। কারণ প্রতি বছর নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৪০ গ্রামে ১৮টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে ৪০০ কিলোমিটার লাইনের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। এতে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি টাকা। সরকারের এত টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতের আলো পেয়ে খুশি হয়েছে এসব চরের বাসিন্দারা।

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এসব চরের বেশিরভাগ মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন দপ্তরে উন্নয়ন হলেও নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রতিবছর বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনের বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চরাঞ্চলে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার খাদেমুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ইতোমধ্যে গ্রিড ভুক্ত এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ করেছি। অফ গ্রিড ভুক্ত এলাকায় বিদ্যুতায়নের জন্য কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় চরাঞ্চলের ৪০ গ্রামে নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

জুয়েল রানা/এমএসআর