নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে পটুয়াখালীর দুর্গম চর রাঙ্গাবালীতে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বইছে।

আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের প্রায় ২১ হাজার মানুষকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে গ্রাহকেরা। বিদ্যুতের আলো জ্বলতেই উপজেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। 

পটুয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তাল আগুন মুখা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় রাঙ্গাবালী উপজেলায়। নৌপথে মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে ঘুরতে যান পর্যটকরা। তবে এতদিন বিদ্যুৎ না থাকায় রাঙ্গাবালীতে রাত কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব মিয়া বলেন, আগে জেনারেটর বা সোলার প্যানেল দিয়ে মোবাইল চার্জ দিতে হতো। এখন দিন বদলে গেছে। এখন আর জেনারেটর ব্যবহার করতে হয় না। 

স্থানীয় বাসিন্দা জামান মিয়া বলেন, জীবনেও ভাবি নাই আমরা বিদ্যুৎ পামু। আগে সন্ধ্যার মধ্যে সবাই দোকানপাট বন্ধ করে ঘুমাত। এখন গভীর রাতেও বিক্রিবাট্টা জমজমাট।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. প্রিন্স মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎ আসার আগে সোলার প্যানেল ও জেনারেটরই ছিল ভরসা। বিদ্যুৎনির্ভর যেসব কাজ গলাচিপা ও পটুয়াখালী যেয়ে করতে হতো এখন তা এখানেই করা যাচ্ছে। শত বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রাঙ্গাবালীর মানুষের। 

মোবাইল ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, বিদ্যুৎ আসায় আমাদের বিক্রি অনেক বেড়েছে। আগে বিদ্যুৎ না থাকায় ডেকোরেশন ভালো দেখাত না। তাই বিক্রি তত হতো না। আগে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

ব্যবসায়ী মো. রাহাত বলেন, আগে সৌরবিদ্যুতের মালামাল বিক্রি হতো। বিদ্যুৎ আসায় এখন অনেক ইলেকট্রনিক পণ্য বেশি চলে। আগে প্রতিদিন তিন হাজার টাকার মতো সোলারের পণ্য বিক্রি হতো। এখন বিদ্যুতের মালামাল ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে দিনে।

রাঙ্গাবালী সিঙ্গার শোরুমের ম্যানেজার বাছাত হোসেন আকন বলেন, বিদ্যুৎ পাওয়ার পর আমরা শোরুম দিয়েছি। বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। ঘরে ঘরে টিভি-ফ্রিজ পৌঁছে যাচ্ছে।

মোবাইল ফোন ক্রেতা সাগর মোল্লা বলেন, আগে মোবাইল ফোন চার্জ দিতে সমস্যা হতো। তাই অনেকেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করত না। এখন সবাই স্মার্ট ফোন কিনছে। ফলে পৃথিবীর যাবতীয় তথ্য তরুণ প্রজন্মের হাতের মুঠোয় এসে যাচ্ছে। 

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসার মাশফাকুর রাহমান বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় মৎস্য ও কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে নতুন ধারার সূচনা হবে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে আইচ প্লান্টসহ অটো রাইস মিলের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 

পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার শাহ্ মো. রাজ্জাকুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ১৮ হাজারের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২১ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কাজ চলছে।

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এইচকে/