এবার জেলা আওয়ামী লীগের পদ হারালেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) জরুরি সভা করে তাকে নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যহতি দেয় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।

বিকেলে নগরীর অলোকার মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুুদ দারা।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারসহ এতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মেয়র আব্বাস আলীকে নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তাকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২৪ নভেম্বর মেয়র আব্বাস আলীকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক পদ থেকে অব্যহতি দেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ।

আব্বাস আলী নৌকা প্রতীকে টানা দুই মেয়াদে কাটাখালী পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। কাটাখালীতে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের সিটি গেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বসালে ‘পাপ হবে’ এমন মন্তব্য করেন মেয়র আব্বাস।

২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই উত্তাল রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গন।

এদিকে, মেয়র আব্বাস আলীর অপসারণ চেয়েছেন পৌরসভার কাউন্সিলররা। শুক্রবার সকালে পৌর ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই দাবি জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনজুর রহমান জানান, মেয়র আব্বাস আলী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তি করেছেন। 

এ ছাড়া তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও তার পরিবার নিয়ে অশালীন কথা বলেছেন। এটা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন ও অপরাধ।

এই কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, মেয়র আব্বাস আলী পৌরসভার কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, জোর করে সই নেওয়া, কাউন্সিলরদের হুমকি প্রদান করেছেন। 

তিনি সরকারি খালের ওপর দুটি বিশাল ভবন তুলেছেন, এ জন্য তিনি কোনো সভা ডাকেননি। তিনি পৌরসভার নাম করে চাঁদাবাজি করেছেন। তিনি একটি হত্যা মামলায় জামিনে আছেন। এসব কারণে সব কাউন্সিলর তার অপসারণ চান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাতে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আনোয়ার সাদাতের সভাপতিত্বে পৌরসভায় জরুরি বৈঠকে বসেন কাউন্সিলররা। 

সেখানে মেয়র আব্বাস আলীর ওপর অনাস্থা প্রস্তাব আনেন পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হোসনে আরা। পৌরসভার ১২ কাউন্সিলর সেই প্রস্তাবে সই করেন। মধ্যরাতে সেই প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের বাংলোয় পৌঁছে দেন কাউন্সিলররা।

কাউন্সিলরদের পত্র গ্রহণের পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের জানান, কাটাখালী পৌরসভা কাউন্সিলরদের চিঠিটি তিনি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ২৩ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে আরএমপির তিন থানায় জমা পড়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি অভিযোগ। যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নগর পুলিশ।

 ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই/জেএস