আবুল খায়ের। পেশায় একজন রেন্ট এ কার চালক। সারাদিন টঙ্গীর গাড়ি চালিয়ে যা আয় করতেন তা দিয়েই মাজার বস্তিতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সুখের সংসার। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরে নতুন একটি সকালের আশায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝ রাতে আগুনের লেলিহান শিখায় ঘুম ভাঙল আবুল খায়েরসহ মাজার বস্তির হাজারো পরিবারের।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, টঙ্গীর মাজার বস্তিতে হাজারের ওপর ঘর-বাড়ি রয়েছে। শনিবার (২৭ নভেম্বর) ভোররাতে আগুনে পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। তিনটি ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আবুল খায়ের বলেন, শুক্রবার রাতে ঘরে ফিরে সবাইকে নিয়ে ঘুমিয়ে যাই। মাঝরাতে আগুনের তাপ ও আশপাশের মানুষের ছোটাছুটির শব্দে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠি। আগুন দেখে বউ-বাচ্চাকে নিয়ে কোনো রকম দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছি। ঘরে টেলিভিশন, ফ্রিজ, আলমারি, শোকেসসহ অন্যান্য আসবাব ছিল। এক আগুনেই সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। একটা সুতা পর্যন্ত বের করতে পারিনি।

বস্তির দোকানদার সালেহা আক্তার। স্বামী, সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে টঙ্গীর মাজার বস্তিতেই বসবাস করেন। আগুনের ভয়াবহতা যে কি পরিমাণ ছিল তা বোঝা যায় তার বর্ণনায়। তিনি বলেন, আগুনের তাপে ঘুম ভাঙে। দেখি আশপাশের সবাই ছোটাছুটি করছে, সবার মধ্যেই বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমিও দৌঁড় দেই। স্বামী-সন্তানের খোঁজে সাথে সাথেই ফিরে আসি। পরে বস্তিতে থাকা আরেক বোন রেখাকে ডাকি। সে তার তার স্বামী-সন্তান নিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় সে আগুন লাগছে বলে সবাইকে ডাকতে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, পাশের ঘরেই তার ভাইও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। জীবিকার তাগিদে শুক্রবার রাতে তিনি বস্তিতে ছিলেন না। দুই সন্তান এক রুমে ও তিনি অন্য এক রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুন লাগার পর তার ভাবি পাশের রুমের টিনের বেড়া কেটে দুই সন্তানকে বের করে আনেন। আরেকটু দেরি হলেই বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।

রোকসানা নামে বস্তির আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা যারা বস্তিতে বসবাস করি তারা সবাই গরিব অসহায়। দিন এনে দিন খাই। আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? 

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা জানান, টঙ্গী ঝিলের ওপর সরকারি জায়গায় গড়ে উঠা মাজার বস্তিতে ৩টা ৫৫ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কুর্মিটোলা ও উত্তরার ফায়ার স্টেশনের ৯টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তারা ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মশার কয়েল থেকে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। সেখানকার ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। আগুনের তাপে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো পাইপ লিকেজ হয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। প্রথমে টঙ্গী ফায়ার স্টেশন এবং পরে ঢাকার কুর্মিটোলা ও উত্তরার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান। আগুনে ছোট ছোট কম বেশি পাঁচশত টং ঘর এবং ঘরে থাকা মালামাল পুড়ে গেছে। সেখানে নিম্ন আয়ের লোকজন বসবাস করতেন।

শিহাব খান/এসপি