ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে পাবনার তিন উপজেলার ২৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ও একটি পৌরসভায় মেয়র পদে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় ভোটকেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি লক্ষ করা গেছে।

সকাল থেকে চাটমোহর উপজোলার ফৈলজানা ইউনিয়নের শরৎনগর উচ্চ, কুয়াবাশী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার কেন্দ্রসহ কয়েকটি এলাকার কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারের দীর্ঘ সারি।

জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন আলী আখন্দ। তিনি বলেন, সবার আগে ভোট দিতে সকাল সকাল কেন্দ্রে এসেছি।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাওছার আহমেদ বলেন, নিরাপত্তা-ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে। এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৮৮০ ভোটার রয়েছেন।

ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রজব আলী প্রামাণিক। তিনি বলেন, কোনো ঝামেলা ছাড়া ভোট দিতে পেরেছি। আমাদের অনেক শঙ্কা ছিল ভোটকেন্দ্র যেতে পারব কি না। তবে কোনো সমস্যা ছাড়াই ভোটকেন্দ্র আসছি। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছি।

গুনাইগাছা ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে আসা মিলি আক্তার বলেন, ভোটগ্রহণের দুই দিন আগেও আমাদের ইউনিয়নে নৌকা-স্বতন্ত্র  প্রার্থীর সংঘর্ষে অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তখন থেকেই আমরা আশঙ্কা করছিলাম কেন্দ্রে যেতে পারব না। সকালে কেন্দ্রে এসে ভালো লাগছে।

ফৈলজানা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হানিফ উদ্দিন বলেন, আমার এলাকায় ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। ভোটাররা ঠিকমতো ভোট দিলে বিপুুল ভোটে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একই ইউনিয়নের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, শত শত নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্রে আসছেন। পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছে। তবে ভোটগ্রহণের আগে শঙ্কা ছিল ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারবে কি না? এমন শঙ্কা এখন নেই বলে জানান তিনি।

বেড়া পৌরসভায় ৯ নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা রজিনা খাতুন বলেন, চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষে ভোটকেন্দ্রে আসা নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও কেন্দ্রে এসে স্বতঃফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে।

বেড়া পৌরসভার নৌকার প্রার্থী আসিফ শামশ রঞ্জন বলেন, জনগণ শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছে বলে আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। মেয়র হলে আমি বেড়া পৌরসভাকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী কেন্দ্র দখল বা জালভোট দেবে না।

বেড়া পৌরসভার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বেড়া পৌরসভায় ১৭ বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলেছি। আধুনিক নগর গড়ার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই জনগণের দাবির মুখে প্রার্থী হয়েছি। দল মনোনীত প্রার্থী আমার ভাতিজা হলেও রাজনীতিতে সে নতুন, অনভিজ্ঞ। তার তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাকে কেউ ভোট দেবে না।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে ভোটাররা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। কোনো প্রার্থী বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, পাবনার তিন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্নের লক্ষ্যে বিজিবি, পুলিশ ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র‌্যাব, আনসার সদস্য এবং সাদা পোশাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। 

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

রাকিব হাসনাত/এসপি