তৃতীয় ধাপে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের মধ্যে ১৪টি হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনের ১৩টি ইউনিয়নে দ্বিতীয় অবস্থানেও নেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।

দুই উপজেলার মধ্যে নৌকার একমাত্র প্রার্থী ভাঙ্গার কাউলিবেড়া ইউনিয়নে মো. রেজাউল করিম বিজয়ী হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার (২৮ নভেম্বর) দ্বিতীয় ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি এবং চরভদ্রাসন উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আহমেদ ৬২৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ফিরোজুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে পান ৪৮৪৬ ভোট। সেখানে নৌকা প্রতীকের ফরিদ খান ৩০৩১ ভোট পেয়ে ৮ জনের মধ্যে চতুর্থ হন।

তুজারপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়ালিউর রহমান টেবিল ফ্যান প্রতীক নিয়ে ২১৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়াব ভূইয়া টেলিফোন প্রতীক নিয়ে ১৫৭০ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৫২৬ ভোট।

মানিকদাহে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম শহিদুল্লাহ আনারস প্রতীক নিয়ে ৩৪২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ মিয়া টেলিফোন প্রতীক নিয়ে পান ২৮২৫ ভোট। সেখানে আওয়ামী লীগের মো. ইমারত হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে পান ২৩৫৯ ভোট।

আলগীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ম ম সিদ্দিক মিয়া চশমা প্রতীক নিয়ে ৪১১৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাউসার ভূইয়া ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৩২৯৯ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন মিয়া ১০১২ ভোট পেয়ে ৭ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সবার শেষ অবস্থান করেন।

কাউলিবেড়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রেজাউল করিম ৫৮১৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আশরাফুল আলম আনারস প্রতীক নিয়ে ৫০৪২ ভোট পান।

হামিরদীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খোকন মিয়া মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৪০২০ ভোটে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান আনারস প্রতীক নিয়ে ৩৭৭৭ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ১১৭৯ ভোট পেয়ে চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে সবার শেষ অবস্থান পান।

চান্দ্রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মালেক মোল্লা ৪১০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩৮১৬ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রুপাই মাতুব্বর ২১৪১ ভোট পান।

চুমুরদীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে ৩২৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম শিকদার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পান ১৭৭০ ভোট। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহিদ ১৩৬৮ ভোট পেয়ে চার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় স্থান পান।

নাসিরাবাদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলমগীর খান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২৮০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী ২৫৩৮ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নৌকা প্রতীক নিয়ে ২২৩৫ ভোট পান।

নুরুল্লাগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিন আলম ৪৯৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তরিকুল ইসলাম ৩৭১৬ ভোট পান। সেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফ আলী ১৯৬৪ ভোট পান।

কালামৃধায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল মাতুব্বর ৩৮৬৯ ভোট পেয়ে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এসকেন্দার আলী খলিফা ২৮১০ ভোট পান।

এবং আজিমনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজাহান হাওলাদার আনারস প্রতীক নিয়ে ৫১০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব মাতুব্বর মোটরসাইকেল ৩৭৯০ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বশির আহমেদ ৩০৩ ভোট পান।

এদিকে চরভদ্রাসন উপজেলার চরভদ্রাসন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদ খান ৫৭৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাফুজুর আনারস প্রতীক নিয়ে ৫১৭৪ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগের খোকন মোল্লা ১৬২৪ ভোট পেয়ে ৫ জনের মধ্যে চতুর্থ অবস্থান পান।

গাজীরটেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৪৫৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরহাদ হোসেন চশমা প্রতীক নিয়ে ৪৩৭৮ ভোট পান। সেখানে নৌকার প্রার্থী আহসানুল হক ৩০৩২ ভোট পান।

চর হরিরামপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির টেবিলফ্যান প্রতীক নিয়ে ১৯৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলহাস শিকদার টেলিফোন প্রতীক নিয়ে ১৪৪১ ভোট পান। সেখানে আওয়ামী লীগের কবির হোসেন ৬৮৪ ভোট পান।

এ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। আমরা সে মোতাবেকই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রার্থীর বড় ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উপজেলার ১২টি এবং চরভদ্রাসন উপজেলার ৩টি-সহ মোট ১৫ ইউনিয়নে গতকাল রোববার (২৯ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

জহির হোসেন/এনএ